বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাজারের ফকিরের জন্য শামীম ওসমানের অনন্য উপহার

  •    
  • ৮ জুন, ২০২২ ০৮:৪৬

২০০৭ সালের দিকে শামীম ওসমানের পরিবারের একজন হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন৷ তখন শামীম তাকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করেন। শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আব্দুল জাবিরের, যিনি জাবির ফকির নামে পরিচিত। তিন বছর পর তার বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে মন খারাপ হয় শামীমের। পরে তার জন্য দৃষ্টিনন্দন আবাসনের ব্যবস্থা করেন।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে আশ্রয় নিয়েছিলেন আব্দুল জাবির। ধীরে ধীরে তার অতীতের সব পরিচয় মুছে গিয়ে ফকির হিসেবেই পরিচিতি পান।

নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান মাজারে আসার পর জীবন আবার পাল্টে গেল জাবিরের।

আনুমানিক এক যুগ আগে শামীম ওসমান গিয়েছিলেন মাজারে। সেখানেই দুজনের পরিচয়। জাবিরে মুগ্ধ হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। তাকে ‘বাবা’ সম্বোধন শুরু করেন।

একপর্যায়ে ‘বাবার’ বাড়িতে আসেন ‘সন্তান’। জীর্ণশীর্ণ ঘর দেখে মন খারাপ হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি তৈরি করে দেবেন। পরে সে কথা রাখেন শামীম। তার ভাষায়, আল্লাহ তাকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন।

তবে ‘বাবাকে’ যে বাড়ি শামীম করে দিয়েছেন, তাতে তিনি থাকেন না। তার বড় ছেলে আবদুল কাদির থাকেন সেখানে। ছোট ছেলেকে নিয়ে সেই বাবা থাকেন জীর্ণশীর্ণ টিনের ঘরেই, যে ঘর দেখে মন খারাপ হয়েছিল শামীম ওসমানের।

কাদির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আব্বার কতায় বউ পুলাপানরে লইয়া শামীম ওসমানের দেয়া বাড়িত থাহি। তরিতরকারি বেইচ্যা কোনো রহমে সংসার চালাই। ছোড ভাইরে লয়া আব্বায় ভাঙাচুরা টিনের ঘরে থাকে। আব্বার হেই বাসাতই ভালো লাগে। ছোড ভাই গিরস্তি (কৃষি কাজ) করে। আবার আব্বারেও দেহে।’

জাবিরের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চারফরাদি ইউনিয়নের চরআলগী এলাকায়। ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে এই এলাকাটি বন্যাপ্রবণ। পানি উঠলে চরম দুর্ভোগ হয়। তাই শামীম ওসমান নদীর অন্য পারে তৈরি করে দিয়েছেন বাড়িটি।

সেই এলাকাটি প্রশাসনিকভাবে পড়েছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। পাগলা থানার দত্তেরবাজার ইউনিয়নের বিরুই গ্রাম সেটি।

সেই বাড়ির দেয়ালে লাগানো হয়েছে সিরামিক ইট, পাঁচটি দরজা ও ১১টি জানলায় উন্নতমানের নকশী করা কাঠ, ওপরে রঙিন টিন ও দুটি দোলনা। ঘরের ভেতর রাখা হয়েছে একটি চেয়ার। নামাজ পড়ার আলাদা একটি কক্ষও আছে।

ভেতরে-বাইরের বিভিন্ন অংশে কারুকাজে খচিত বিভিন্ন আরবি লেখা রয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়িটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

বার্ধক্যজনিত কারণে জাবির চলাফেরা করতে পারেন না আগের মতো। স্মৃতিভ্রমও হয়েছে খানিকটা। বড় ছেলে আব্দুল কাদিরের কাছ থেকেই জানা গেল পুরো কাহিনি।

কীভাবে পরিচয়

জাবিরের বড় ছেলে কাদির জানান, তার বাবা হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর ভক্ত। চার মেয়ে ও দুই ছেলেসহ স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে রেখে পড়ে থাকতেন মাজারে। এলাকায় নিজেও পির হিসেবে পরিচিতি পান৷ তার বাড়িটিকে পিরবাড়ী বলে ডাকতে থাকে স্থানীয়রা।

শামীম ওসমান এখানে কেন বাড়ি করে দিয়েছেন, জানতে চাইলে কাদির জানান, আওয়ামী লীগ নেতা মাঝেমধ্যে মাজারে গিয়ে দোয়া চাইতেন। তার বাবার কাছ থেকে ফল পেয়ে ভক্ত হয়ে যান৷ তাই তাদের এমন বাসা করে দিয়েছেন।

পরিচয়ের শুরুটা জানতে চাইলে প্রথমে বলতে রাজি হননি কাদের। একপর্যায়ে বলেন, এসব ঘটনা কারও কাছে বলতে শামীম ওসমান ও তার বাবার নিষোধাজ্ঞা রয়েছে।

পরে বাবার মুখে শোনা কথা বর্ণনা করে বলেন, ২০০৭ সালের দিকে শামীম ওসমানের পরিবারের একজন হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন৷ তখন শামীম ওসমান তাকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করেন। শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে সে সময় তার বাবার সঙ্গে পরিচয়। তখন তার বাবা মাজারেই পড়ে থাকতেন ও বিভিন্ন লোকজনকে দোয়া করে দিতেন।

জাবিরের বড় ছেলে কাদির ও তার স্ত্রী-সন্তান

কাদির বলেন, শামীম ওসমান তার বাবার কাছে দোয়া চাইলে সেই স্বজনকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করেন। পরে সত্যি সত্যি তার সন্ধান মেলে। এতে তার বাবার প্রতি আস্থা সৃষ্টি হয় শামীম ওসমানের।

এরপর থেকেই তার বাবাকে শামীম ওসমানও ‘বাবা’ বলে ডাকতে শুরু করেন বলে জানান কাদের। পাশাপাশি কিছু দরকার কি না-তাও জিজ্ঞেস করতেন।

‘বাবাকে’ দেখতে এসে জমি কেনা, বাড়ি তোলা

আবদুল কাদির বলেন, তার বাবা শামীম ওসমানকে বাড়িতে দাওয়াত দিলে তিনি সেখানে আসেন। ২০১০ সালের দিকে তাদের জরাজীর্ণ ঘরের বদলে একটি বাসা নির্মাণ করে দিতে চান৷ তখন তাদের ইচ্ছায় গফরগাঁওয়ে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি কেনেন। ২০১৮ সালে সেখানে বাসাটি নির্মাণ করা হয়।

জাবির ফকিরের স্মৃতিভ্রম

এ বিষয়ে জানতে আব্দুল জাবির ফকিরের সঙ্গে দেখা করলে তিনি কিছু স্মরণ করতে পারেননি। শুধু বলেছেন, শামীম ওসমান তাকে বাসাটি উপহার দিয়েছেন।

পুরোনো বাড়ির সামনে আব্দুল জাবির

স্থানীয় মাজহারুল ইসলাম রাজু নামের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গফরগাঁওয়ে অনেক ধনী ব্যক্তি থাকলেও এমন দৃষ্টিনন্দন বাসা আজ পর্যন্ত কেউ নির্মাণ করতে পারেননি। তবে অযত্নে এর সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে ভেতরে পানি পড়ে।’

আফজালুল হক নামের আরেকজন বলেন, ‘চার বছর ধরে জাবির ফকির তার বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি কিছুই স্মরণ করতে পারেন না। শামীম ওসমান এত টাকা খরচ করে কেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন তা আজও আমাদের অজানা। হয়তো ওই ফকিরের দ্বারা ভালো ফল পাওয়ায় ভক্ত হয়েছেন।’

গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার দত্তেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোকসানা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটের মাজারে আসা বিভিন্ন লোকজনকে আব্দুল জাবির দোয়া করে ফুঁ দিয়ে দিতেন। এ জন্যই অনেকেই তাকে নামের পরে ফকির ডাকতেন৷ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার ভক্ত ছিলেন বলেই এত সুন্দর বাসা নির্মাণ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি আমাদের এলাকায় এখন পির নামেই পরিচিত।’

আল্লায় করাইছে: শামীম ওসমান

জাবির ফকিরকে বাড়ি করে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শামীম ওসমানও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ করেছি, আল্লাহ করাইছে। ওনি খুব কামেল লোক। ওনার বাড়ি নদীতে ভাইঙা যাচ্ছিল।’

তিনি বলেন, ‘এটা বলতে চাই নাই। তবে জানে এটা এলাকার লোকজন। বাড়িটা মনে হয় একটা পুরস্কারও পাইছে। বাড়িটা যিনি করেছেন, আর্কিটেকচারটা অনেক সুন্দর করে করেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর