বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আউয়াল কমিশন কঠোর, প্রাথমিক পদক্ষেপে প্রশংসা

  •    
  • ৮ জুন, ২০২২ ০৮:০৮

আউয়াল কমিশনের বর্তমান পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন ফেমার প্রধান মুনিরা খান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক কাজে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে তারা জনগণের বিশ্বাস আনতে পারবে। তবে আমরা দেখেছি প্রথম দুই-একটা নির্বাচন ভালো হয়৷ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে না। নতুন কমিশন এভাবে কমিটমেন্ট রেখে কাজ করতে পারলে জনগণ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী অংশগ্রহণে উৎসাহী হবে, ভোট দিতে উদ্ধুদ্ধ হবে।’

দায়িত্ব নেয়ার তিন মাসে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এমন কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এর আগের কমিশন করে দেখাতে পারেনি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠার পর ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়া, অন্য একটি এলাকায় নৌকা মার্কার এক প্রার্থীর ভোট ছিনিয়ে নেয়ার বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর সেখানে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ এসেছে।

আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নিয়েছে। কেউ অভিযোগ করার পর তদন্তের ওপর নির্ভর করেনি কমিশন।

একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে একজনকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর সেখানে নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয়ার দুই দিন পর দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচন কমিশন এখনও ‘ভোটের খাতা’ খুলতে পারেনি। নতুন এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষার ফলাফল দেখতে ভোটারদের অপেক্ষা করতে হবে চলতি মাসের মাঝামাঝি ১৫ জুন পর্যন্ত। সেদিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং বেশ কিছু পৌরসভা ও ইউনিয়নে ভোটের তারিখ রয়েছে।

এই নির্বাচনের ভোটের প্রচার চলাকালে এখন পর্যন্ত সহিংসতার কোনো তথ্য আসেনি গণমাধ্যমে। ভোটে প্রচারে বাধার যে অভিযোগগুলো গত কয়েক বছরে বড় হয়ে এসেছিল, সেগুলোও শোনা যায়নি সেভাবে।

যেসব এলাকায় ভোট হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন কমিশন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটি এর আগের কমিশন অগ্রাহ্য করেছিল। ভোটকেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিত কারও উপস্থিতি যেন না থাকে, সেটি পর্যবেক্ষণে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ এসেছে।

আগের নির্বাচন কমিশনগুলো যখন অভিযোগ না পেলে কিছু করার নেই বলে ব্যাখ্যা দিত, সেখানে বর্তমান কমিশন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজ উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা কমিশনের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিরোধী দল বিএনপি কমিশনের এসব উদ্যোগকে লোকদেখানো বলে সন্দেহ প্রকাশ করছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ‘দু-একটি নির্বাচন দেখে’ প্রতিক্রিয়া জানানোর পক্ষে।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আওয়ামী লীগের তিনজন সংসদ সদস্যকে সাবধানও করে দিয়েছে কমিশন। এরা হলেন শরীয়তপুর-১ আসনের ইকবাল হাসান, ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও ঝিনাইদহ-১ মো. আব্দুল হাই।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

‘তারা জনগণের বিশ্বাস আনতে পারবে’

আউয়াল কমিশনের বর্তমান পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন ফেমার প্রধান মুনিরা খান। তার প্রত্যাশা, এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন উপহার দেবে বর্তমান কমিশন।

নিউজবাংলাকে মুনিরা বলেন, ‘প্রাথমিক কাজে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে তারা জনগণের বিশ্বাস আনতে পারবে।’

তবে ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রথম দুই-একটা নির্বাচন ভালো হয়৷ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে না। নতুন কমিশন এভাবে কমিটমেন্ট রেখে কাজ করতে পারলে জনগণ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী অংশগ্রহণে উৎসাহী হবে, ভোট দিতে উদ্ধুদ্ধ হবে।’

বিদায়ী সাবেক নির্বাচনের কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আমি পজিটিভভাবেই দেখছি।’

এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে ইসি জনগণের আস্থা ফেরাতে পারবে বলে মনে করেন কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কমিশন নিজে কখনও তো অনাস্থার জায়গা তৈরি করে না। জনগণের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি একেকজনের একেক রকম। যে যেভাবে নেয়।’

‘রাঘব বোয়াল ধরতে হবে’

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের দৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনের কিছু কাজ প্রশংসনীয়। তবে তার মতে অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে ভবিষ্যতে।

আওয়ামী লীগ নেতার প্রার্থিতা বাতিলসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ আছে আমরাও এর প্রশংসা করি। তবে এগুলো চুনোপুটি। রাঘব বোয়ালের ক্ষেত্রে পারবে কি না।’

তিনি বলেন, ‘তাদের সাহসী ভূমিকা নিতে হবে, বলিষ্ঠতা প্রদর্শন করতে হবে৷ তাহলে তারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে।’

কমিশনের কোথায় আরও বলিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ আছে- এই প্রশ্নে বদিউল বলেন, ‘আরপিও অনুযায়ী, দলের অঙ্গ সংগঠন থাকতে পারবে না, বিদেশি শাখা থাকতে পারবে না৷ এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হলফনামার তথ্য যাচাই করছে না।’

কমিশনের বেশ কিছু পদক্ষেপ অর্থহীন বলে মনে করেন এই এনজিও কর্মী। কমিশন যে সংলাপগুলো করছে, সেগুলো পর্দার অন্তরালে সংলাপ করার পরামর্শ দেন।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে কমিশনের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন আছে সুজন সম্পাদকের। তিনি বলেন, 'এই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দুই কমিশনার তো আগেই রায় দিয়ে দিয়েছেন।’

তিন দলের তিন মত

নির্বাচন কমিশনের এখন পর্যন্ত যত পদক্ষেপ দৃশ্যত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেছে। তবে ক্ষমতাসীন দল এই কমিশনের প্রশংসা করছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝিনাইদহে একটি পৌরসভার নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এর ব্যাখ্যা দিয়েছে। আমার মনে হয়েছে, এই ইসি নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করছে। এতটুকু বলতে পারি, অন্তত করার চেষ্টা করছে।’

কমিশন দায়িত্ব নেয়ার আগে থেকেই তাদের বিরোধিতা করছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির আগের দুই সংলাপে অংশ নিলেও এবার তাতে যোগ দেয়নি দলটি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে না যাওয়ার কথাও বলছে তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ধারণা, এসব কমিশনের কৌশল। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুই-চারটি ঘটনা দিয়ে বাকি সব ঢাকার চেষ্টা। জনগণও ঠুলি পড়ে বসে নাই। তারা সব দেখতে পায়। জনগণ সরকার গঠন করাতে পারে, জনগণই আবার নামাতে পারে। তাই বলি, ট্রিরিক্স করে লাভ হবে না।‘

বিএনপির মতোই জাতীয় পার্টিও নির্বাচন নিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছে না- এমন বক্তব্য বারবার দিয়ে আসছেন দলটির নেতারা।

বর্তমান কমিশনের পদক্ষেপের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় হাজার হাজার শত শত। একটা-দুইটায় কী করল, সেটা কোনো ব্যাপার হতে পারে না। চট্টগ্রামে যে ভোট স্থগিত করেছে, সেটা চক্ষু লজ্জার কারণে। এসব কোনো ঘটনা না। এগুলোর সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো তুলনা হতে পারে না। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে দুই-একটা নির্বাচন হোক, তারপর বোঝা যাবে যে, কী হবে।’

কঠোর অবস্থান থেকে সরবে না নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার সুযোগ নাই।’

তিনি বলেন, কেবল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নয়, জাতীয় নির্বাচনে এমন কঠিন পদক্ষেপ থাকবে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আইন অনুযায়ী কমিশন যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এ বিভাগের আরো খবর