ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাঙ্গামাটির সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে।
এই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ারের নাম থাকলেও চিনুর দাবি, মামলার বাদী তিনি নিজেই।
২০২০ সালে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে হওয়া এই মামলায় ফজলে এলাহীকে মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেপ্তার করে রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন।
ফজলে এলাহী জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক।
ওসি বলেন, ‘চট্টগ্রাম থানা থেকে আজকে (মঙ্গলবার) গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামীকাল সকালে তাকে আদালতে তোলা হবে।
‘২০২০ সালে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলার প্রসেস নাম্বার ৮১৭/২২। মামলা নম্বর- ২৮/২১।’
ওসি জানান, মামলার পরোয়ানায় বাদীর নামের জায়গায় নাজনীন আনোয়ার লেখা রয়েছে। তবে নাজনীনের মা সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর দাবি, তিনিই মামলাটি করেছেন।
চিনু বর্তমানে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
মামলার বিষয়ে নিউজবাংলাকে চিনু বলেন, ‘ডিসি বাংলো পার্কে আমার মেয়ে লিজ নিয়ে রেস্টুরেন্ট দেয়। ৩ বছরের জন্য লিজ ছিল, বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিসি পরিবর্তন হলে রেস্টুরেন্ট নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। ডিসি অফিসের লোকজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের বিবাদ হয়।
‘সে সময় এলাহী নিউজ করে যে এই লিজ পেতে আমি আমার প্রভাব খাটিয়েছি। সে আপত্তিকর কথাবার্তা লিখেছে। আমি তখন কোর্টে মামলা করেছি।’
পরোয়ানায় মেয়ের নাম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের নাম কেন দিয়েছে জানি না, বাদী আমি-ই।’
সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে নেয়া হচ্ছে রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায়। ছবি: নিউজবাংলাএ বিষয়ে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেসবাহ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি মামলা করার পর যদি পরিচালনার পাওয়ার অন্য কাউকে দেয়, তাহলে ওয়ারেন্ট ইস্যুতে পরিচালনাকারীর নাম থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয় না।’
ফজলে এলাহীর স্ত্রী সেলিনা সুমি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিনুর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে একটা নিউজ করেছিলেন আমার হাজব্যান্ড। সেটা ডিসি পার্কের একটা রেস্টুরেন্টের লিজ নেয়া বিষয়ে। হঠাৎ আজকে পুলিশ এসে জানাল তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট। আমরা কিছুই জানতাম না।’
গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণ পরই নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন সাংবাদিক ফজলে এলাহী। তাতে তিনি বলেন, ‘ফিরোজা বেগম চিনু ও তার মেয়ের মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট দেখিয়ে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ.... সাংবাদিকতার এই প্রতিদান ??? আমার মৃত্যুর জন্য চিনু ও তার মেয়েকে দায়ি করে গেলাম...... রাঙামাটিবাসি এদের বিচার করিও’। (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তীত)।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাজানি হলে থানা চত্বরে উপস্থিত হন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তারা তার মুক্তির দাবি জানান।
এক সপ্তাহ আগেই স্বাধীন সাংবাদিকতার বাধা দূর করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংশোধনীর কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ডেটা সুরক্ষা আইন-বিষয়ক সংলাপে গত ৩ মার্চ যোগ দেন আইনমন্ত্রী।
সেখানে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের একটা কিছু পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে যদি কোনো অন্তরায় থাকে তা দূর করা হবে। আমরা জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করেছি।
‘আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে এ-সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে কমিটি আইনটি সংশোধন নিয়ে কাজ করছে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর এ-সংক্রান্ত আইনের বেস্ট প্রাকটিসকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। তখন এ আইন নিয়ে আর কারও প্রশ্ন থাকবে না।’
আইনমন্ত্রী এই আইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, চুরির সংজ্ঞা সাধারণত কোনো বাড়িতে চোরের ফিজিক্যালি উপস্থিতিতে চুরি করা। কিন্তু এখন চোর ফিজিক্যালি উপস্থিত না হয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে করছে। এ প্রক্রিয়ায় কেউ যদি ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে সেটি কি অপরাধ নয়?
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। প্রযুক্তিরও অগ্রসর হচ্ছে। এ প্রযুক্তির নানা অপব্যবহার হচ্ছে। তাতে কিছু দৃশ্যমান অসুবিধা তো তৈরি হচ্ছেই। সেই অসুবিধাগুলো মোকাবিলা করে দেশের মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে।’