ফেসবুকে ভুয়া ছবি ভাইরাল হওয়ার পর বন্ধ করে দেয়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের দেশি মদের দোকানটি চালুর অনুমোদন দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছি। যেকোনো দিন দোকানটি খুলে দেয়া হবে। তবে সব নিয়ম মেনে মদ বিক্রি করতে হবে।’
হালুয়াঘাটের নালিতাবাড়ি রোড এলাকার মদের দোকানটি গত ৭ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এর সাইনবোর্ডের কারণে। দোকানটির সাইনবোর্ডের ছবি ফটোশপে এডিট করে বিকৃতভাবে তা প্রচার করা হয়।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে সাইনবোর্ডের মাঝামাঝি জায়গায় ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। সাইনবোর্ডের ওপরের দিকে বাম পাশে আওয়ামী লীগের লোগো। ডান দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ছবি বসানো ছিল, যা অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা হয়।
মদের দোকানে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ সাইনবোর্ড নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া হয়। ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার পাওয়া ছবিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন অনেকে। প্রকৃত ঘটনা যাচাই করে নিউজবাংলা। অনুসন্ধানে ছবিটি ভুয়া বলে প্রমাণ মেলে।
- আরও পড়ুন: ছবিটি ফটোশপে এডিট করা
তবে ভাইরাল হওয়ায় ওই দোকানের সাইনবোর্ড পরে খুলে ফেলে প্রশাসন। ডিলারের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়।
সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম গত ৯ মার্চ বলেন, ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে দোকানটি এক মাসের জন্য সিলগালা করা হয়েছে। এ ছাড়া দোকানের লাইসেন্স বাতিলের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। দোকানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে।’
কর্মকর্তারা দাবি করেন, হালুয়াঘাটের দোকানটিতে মদ বিক্রির পাশাপাশি নানা অসামাজিক কাজের অভিযোগ আছে। লাইসেন্স ছাড়াও সেখানে মদ বিক্রি হয়। সেখানে মাদকসেবীদের নিয়মিত আড্ডা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছিল। স্থানীয়দের নানা অভিযোগের সত্যতা পেয়েই দোকান সিলগালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা খোরশেদ মঙ্গলবার জানান, ‘মদের দোকানটি ভাইরাল হওয়ার পর জেলা প্রশাসন এক মাসের জন্য দোকানটি সিলগালা করে দেন। তখন আমিসহ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দোকানটি পরিদর্শন করি। তখন থেকে নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দোকানটি সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
‘এরপর উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন একজন ডিআইজি, গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও উপপরিচালক। এ সময় মাদকদ্রব্যের ইন্সপেক্টর চন্দন গোপালকে সাসপেন্ড করে আবারও সাসপেন্ড প্রত্যাহার করা হয়।’
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অধিদপ্তর দোকানটি চালুর অনুমতি দিয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, দেশি মদ বিক্রির জন্য ১৯৭৭ সালে দোকানটি চালু হয়। এর মালিক সারোয়ার জাহান। তবে ম্যানেজারের মাধ্যমেই দোকানটিতে মদের বেচাকেনা চলছিল। গত বছরের ৩০ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দোকানটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। মদ বিক্রির জন্য জেলায় এ রকম পাঁচটি দোকান আছে।
খোরশেদ জানান, প্রতিটি দোকানেই নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে।