জাপান আশা করছে, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ সালের তুলনায় ভালো হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনউদ্দীন বক্তব্য দেন।
জাপানি দূত বলেন, ‘জাপান আশা করছে, আগামী বছরের শেষের দিক থেকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে। ২০১৮ সালের চেয়ে ভালো একটি ভালো নির্বাচন হয় সেজন্য তারা সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।’
২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জন এবং সহিংসতার মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পরের নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক জোট। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের জোটের সমর্থকদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে-এমন অভিযোগও করা হয়।
তবে ২০১৮ সালের চেয়ে ভালো ভোটের প্রত্যাশা করা জাপানি রাষ্ট্রদূত সেই নির্বাচন নিয়ে তাদের বিস্তারিত মূল্যায়নের কথা বলেননি। তবে বলেন, ‘জাপান ২০১৮ সালের নির্বাচনের সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে জাপান।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতো নাওকি বলেন, ‘আগের চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা আশা করি। এমন নির্বাচন হবে যেখানে সহিংসতা হবে না। জাপান আশা করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন বাংলাদেশ আয়োজন করবে। তবে এখানে জনগণের জন্য মিডিয়া কী ভূমিকা রাখে তা অস্বীকার করা যায় না।
‘জাপান আশা করছে, আগামী বছরের শেষের দিক থেকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে। ২০১৮ সালের চেয়ে ভালো একটি ভালো নির্বাচন হয় সেজন্য তারা সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
‘নির্বাচনে প্রতিটি ভোট গণনা জরুরি। প্রতিটি নাগরিক যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে।
‘গণমাধ্যমকে তাদের করণীয়টুকু করতে দেয়া উচিত, যাতে তারা তাদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ১৮ মাস বাকি রয়েছে। তবে মিডিয়া এখন থেকেই তোড়জোড় সৃষ্টি করে দিয়েছে। যার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়ে।‘ইতিমধ্যে সরকার নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। আমি বাংলাদেশের কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। একটি ভালো নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার উত্থাপিত বিষয়টি চালিয়ে যাচ্ছি।’
পদ্মা সেতু বিনিয়োগ টানবেএই মন্তব্য করে জাপানি দূত বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনিয়োগ আসার জন্য একটি আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মতো বাংলাদেশ এত বড় অবকাঠামো নির্মাণে যে সাহস দেখিয়েছে, তার জন্য জাপানের বিনিয়োগকারীদের ৬০ শতাংশ এ দেশে বিনিয়োগ করতে চায়।
‘বিনিয়োগের জন্য দিন দিন অবকাঠামো ও পরিবেশ উন্নতি হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশি কর্মীর জন্য জাপানের দরজা খোলা আছে। আমি আশা করি দক্ষ বাংলাদেশ শ্রমিক জাপানের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’
বাংলাদেশ জাপানের বিনিয়োগকারীদের অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলেও জানান জাপানি দূত। বলেন, ‘এশিয়ার অন্যতম বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অর্থনীতি উল্লেখ করে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আশা করি, অচিরেই বাংলাদেশের জনপ্রতি আয় ৩ হাজার ডলার পেরিয়ে যাবে।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাশে থাকবে জাপানরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে এক প্রশ্নে জাপানি দূত বলেন, এই ইস্যুতে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই দ্রুত, সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন দরকার। মিয়ানমারের সামরিক সরকার অচিরেই গণতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দদের মুক্ত করে গণতন্ত্রকে সচল করবে বলে আমি আশা করি।
‘মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে যে-কোনো বিষয়ে আলোচনা করা একটা জটিল বিষয়। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে জড়িত সকলকে একটি ছন্দে কাজ করতে হবে।’
ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিবিরের প্রশংসাও করেন ইতো। বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি ভাসানচরে রাত্রিবাস করেছি। ওখানে বাস করার আমার অভিজ্ঞতা চমৎকার। বাংলাদেশ একটি খুবই ভালো বসবাসযোগ্য স্থান নির্মাণ করেছে। কিন্তু মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার বিষয়ে আরও যত্নশীল হতে হবে।’
বিমানের ঢাকা-টোকিও সরাসরি ফ্লাইট চলতি বছরইচলতি বছরেই ঢাকা-টোকিও সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশা প্রকাশ করেন ইতো।
তিনি বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ রুটে ফ্লাইট চালু করবে। এটি চালু হলে ঢাকা থেকে নারিতা বিমানবন্দরে যেতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে।‘ফ্লাইট চালু হলে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বাড়বে।’