খুলনা জেলার চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়র অচিন্ত্যকুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন এবং বেতন ভাতা গ্রহণের অভিযোগে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে 8 লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে এ মামলা করেন।এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে চালনা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল চালনা কেসি পাইলট স্কুল ও কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু মেয়র হিসেবে দায়িত্ব ও বেতন-ভাতা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি কলেজের বেতন-ভাতাও গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত না হওয়ায় তিনি আবারও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ করছিলেন।২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অন্য কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না কেউ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ লাখ ৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ করায় দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অচিন্ত্যকুমারের নামে মামলা করা হয়।তবে ড. অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ মামলার কোনো ভিত্তি নেই। শুধু হয়রানি করতে আমার নামে এ মামলা করা হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে আমি যখন নির্বাচনের তফসিল জমা দিয়েছিলাম, তখন ফরমে আমার পেশা লেখা ছিল। বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতার জন্য যদি নির্বাচন করা না যায়, তবে আমার নির্বাচনের প্রার্থিতা হারাতাম।‘ওই সময়ে নির্বাচন কমিশন থেকে আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়নি। আমার নির্বাচনেও কোনো বাধা দেয়া হয়নি।‘নির্বাচনে জিতলাম, দায়িত্ব পালন করলাম। দায়িত্ব শেষ হওয়ার দুই বছর পরে দুদক থেকে ডেকে বলা হলো, আমার মেয়র পদের সম্মানি নেয়া বেআইনি হয়েছে।’অচিন্ত্যকুমার আরও বলেন, ‘মেয়র থাকাকালে যে সম্মানি নিয়েছি ও কলেজ থেকে যে বেতন পেয়েছি, ওই সময়ে আমি সেই টাকার আয়করও দিয়েছি। পৌরসভা থেকে আমার টাকা নেয়া যদি অবৈধ হতো, তাহলে সরকার কেন সেই টাকার ট্যাক্স নিলো?‘এ ছাড়া আমার যে তিন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য। তবে আমি স্কুল শাখা থেকে কখনও বেতন নেইনি। কলেজ শাখা থেকে নিয়মিত বেতন নিয়েছি। এ ছাড়া পৌরসভা থেকে সম্মানি নিয়েছি।’তিনি বলেন, ‘দুদক আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগে মামলা করছে, তাদের ব্যাখ্যা মতে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ১৯ ধারার ২ (ঙ) অনুচ্ছেদে আমাকে মেয়র হওয়ার অযোগ্য বলা হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হইবার জন্য এবং উক্তরূপ মেয়র বা কাউন্সিলর পদে থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি প্রজাতন্ত্রের বা পৌরসভার অথবা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন”।’তিনি বলেন, ‘এই আইনে লাভজনক পদের ব্যাখ্য প্রথম অধ্যায়ের ৫৭ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, “লাভজনক পদ” অর্থ প্রজাতন্ত্র বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সরকারের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বা তদূর্ধ্ব শেয়ার রহিয়াছে এইরূপ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক বেতনভুক্ত পদ বা অবস্থান”।’তিনি বলেন, ‘এই আইনগুলি বিশ্লেষণ করতে সহজে বোঝা যায়, আমি কোনোভাবেই অপরাধী না। তারপরও এখন মামলাটি আদালতে চলে গেছে। আদালত যদি আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে, তবে আমি মেনে নেব। আর যদি খালাস দেয় তবে দুদকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করে দেব।’এ প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী খন্দকার মজিবর রহমান বলেন, ‘চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে করা মামলাটি আদালতে জমা হয়েছে। বর্তমানে সেই মামলাটি তদন্তে রয়েছে, এখনো চার্জশিট জমা হয়নি। তবে মামলার সঙ্গে দুদক যেসব নথি জমা দিয়েছে, তাতেই প্রামাণিত হয় তিনি দোষী। চার্জশিট জমা হওয়ার পরে বিচারিক কাজ শুরু হবে।’
চালনার সাবেক মেয়রের নামে দুর্নীতির মামলায় চার্জশিটের অপেক্ষা
চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। বলা হয়েছে, মামলা মেয়র পদে থেকেও দুটি স্কুলের অধ্যক্ষের বেতন নিয়েছেন। সাবেক মেয়র বলেন, তিনি কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি।
এ বিভাগের আরো খবর/p>