চাহিদার ৪০ ভাগ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের রূপরেখা জানালেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত এক সভার শুরুতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। আগামী ৩ বছরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা এখন যে উৎপাদন করি এটা আমাদের মোট কনজামশনের মাত্র ১০ থেকে ১২ ভাগ। এটা খুবই কম। গত বছর আমরা ১৬ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করেছি। এ বছর করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্বাভাবিক তেলের দাম বেড়েছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা এটা সামলাতে পারছি না।
‘এ বছর ১০ মাসেই ২০ হাজার কোটি টাকার তেল আমরা আমদানি করেছি। আগামী দুই মাসে ২৪-২৫ হাজার কোটিতে চলে যাবে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩ থেকে ৪ বছরে কীভাবে তেলের উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং কতটা বাড়ানো যায়, আবার ধানের উৎপাদনও ব্যাহত করতে চাই না, এটা কীভাবে হবে সেটা নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমরা তিন বছরের একটি পরিকল্পনা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এই যে ভোজ্যতেল নিয়ে একটা হাহাকার চলছে, তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি; মানুষের খরচ বেড়ে গেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে, রিজার্ভেও প্রভাব পড়ছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছিলেন, কেন এত তেল আনতে হবে।
‘আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চেষ্টা করতে হবে কীভাবে বিদেশনির্ভরতা কমাতে পারি। আমরা উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছি। এই জাতগুলো যদি আমরা মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে পারি তাহলে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা অনেকটাই স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছি। কিন্তু ধান উৎপাদন করতে গিয়ে সরিষা ছিল আমাদের তেলজাতীয় ফসল, সেই সরিষার উৎপাদন কমে গিয়েছে। কারণ দুটি, প্রথমত সরিষার আগে আমাদের কোনো ভালো জাত ছিল না। ধানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে এটা টিকে থাকতে পারেনি। এখন যেটা হয় খুব মার্জিনাল, কম উর্বর জমিতে কোনো রকমে কিছু চাষিরা করে।
‘একসময় ছিল, সয়াবিন ছিল গরিবের তেল। বলা হতো, সরিষার ঘ্রাণের জন্য এতে খারাপ জিনিস আছে, শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এটা সঠিক না।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা কীভাবে উৎপাদন বাড়াতে পারি? সরিষার আগের জাত, সাধারণত এটা ৭০০ কেজি তেল উৎপাদন করতে পারে, তরী সেভেন। আমাদের নতুন যে জাত উৎপাদন করেছে, সেটার উৎপাদন ২ টনেরও বেশি, প্রায় তিন গুণ।
‘আমাদের আমন ধানের যে নতুন জাতগুলো রয়েছে, সেগুলো ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে পেকে যায়। সাধারণত এটা লাগে ১৪০ থেকে ১৬০ দিন। সময় কমে আসায় যে নতুন ধান আসবে, সেটা কাটার পর সেখানে সরিষা লাগাব। সেটা আসবে ৮০ থেকে ৮৫ দিনে। এটা কাটার পরে সেই জমিতে আমরা বোরোতে যেতে পারি। এতে সরিষাটা একটা অতিরিক্ত ফসল হলো।’
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই প্যাটার্ন ব্যবহার হয় এমন জমির পরিমাণ হলো ২০ লাখ হেক্টর। এর ২৫ শতাংশেও যদি আমরা সরিষা দিতে পারি, তাহলেও কিন্তু বিরাট উৎপাদন বাড়ানো যাবে। এক বিঘা জমিতে কৃষক ৩০-৪০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করতে পারবে। এটাকে আমরা কর্মসূচি হিসেবে প্ল্যান করেছি। এটাকে আমরা মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাব। এ জন্য বীজ, সারসহ যে প্রযুক্তি আছে সেটা দিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘চর ও উপকূলে বাদাম হতো; এখনও হয়। আমরা আরও বেশি এলাকায় কীভাবে এটা করতে পারি, উপকূলে সয়াবিনও একটি নতুন ফসল। আমাদের বিজ্ঞানীরা কিছু জাত এনেছেন এগুলো নোয়াখালীর সুবর্ণচর, ভোলার চর ফ্যাশন এবং বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে। এর তেলও ভালো। এতে প্রোটিন অনেক বেশি। এটাও একটি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সূর্যমুখীও একটি নতুন ফসল হিসেবে আসছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা এক্সট্র্যাকশনের জন্য মেশিন আবিষ্কার করেছে। এতে করে প্রতি বছর যে ২৪-২৫ লাখ টন তেলের প্রয়োজন হয়, আমরা এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি নিজেরাই উৎপাদন করতে পারব।
‘অর্থাৎ ৪০ ভাগ তেল আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোজ্যতেলের সংকট কাটবে।’