চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে আরও দুটি দেহের পোড়া অংশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৩-এ।
দেহাবশেষ দুটি মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি লাশের ভস্মীভূত অংশ উদ্ধার করেছি। একটি লাশের পাশে ফায়ার সার্ভিসের বুট ও পিপিইর আলামত পেয়েছি। আরেকটিতে সিকিউরিটি গার্ডের পোশাকের পোড়া অংশ ছিল।
‘তাই আমরা ধারণা করছি, একটি লাশ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যের এবং অন্যটি ডিপোর সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা কারো।’
যা ঘটেছিল
নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপো সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায়। সেখানে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে আগুন লাগে।
একে একে ছুটে যায় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও পরে যোগ দেয় কয়েকটি ইউনিট। রোববার সকাল পর্যন্ত আগুন নেভাতে আসা ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫টি।
কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা।
রোববার সকালে আগুন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে এলেও নেভেনি। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ও সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানি সোমবার আগুন নেভাতে কাজ করছে।
আগুন ও বিস্ফোরণে রোববার পর্যন্ত প্রশাসন ৪৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও সোমবার জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৪১।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সোমবার বলেন, ‘একাধিক হাসপাতালে মরদেহ থাকায় গণনায় ভুল হয়েছে। একই মরদেহ দুবার কাউন্ট হয়েছে। পরে সব মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রকৃত সংখ্যা ৪১ জন পাওয়া গেছে।’
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
যে কারণে আগুন
আগুনের ভয়াবহতা আর বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ডিপোর কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিক অ্যাভিয়েশন শিল্প খাতে ব্যবহার করা হয়। উচ্চ চাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে। রপ্তানির জন্য কনটেইনারে করে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিএম ডিপোতে রাখা ছিল।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি। এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে।’
আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ৫টি কমিটি করা হয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবারাত ৩ সদস্যের একটি কমিটি করেছেন।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দিতে এবং নিহত ও আহত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যের আরও একটি কমিটি করা হয়েছে।
৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এ দুর্ঘটনায় সার্বিক শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক এস এম এনামুল হক তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন।
সোমবার বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারাও দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি করেছে।