চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে কোনো বিস্ফোরক ছিল না, তবে ডিপোতে লাগা আগুন নাশকতা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
ঘটনাস্থল ঘুরে এসে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোর আগুন এখনও নেভানো সম্ভব হয়নি। আমদানি-রপ্তানি পণ্য রাখার সেই কনটেইনার ডিপোর আগুনে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। যার মধ্যে বাহিনীটির ৯ সদস্য রয়েছে।
আগুন ও প্রাণহানির পর ডিপো এলাকা পরিদর্শন করেছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এখানে বলা হচ্ছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, এটা কোন বিস্ফোরক আইটেম নয়। এটি অনুমোদিত রপ্তানি পণ্য, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রপ্তানি করছে। এই ডিপো আইএসপিএস কোড (আন্তর্জাতিক জাহাজ, বন্দর সুবিধাদি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোড) অনুসরণ করেছে। যে কমপ্ল্যায়েন্সগুলো ছিল সবগুলোর মেনেছে। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, সবই ছিলো। তারপরও ঘটনাটা ঘটে গেল।
‘আন্তর্জাতিক বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের যে নীতিমালা আছে, সেটাও সেখানে মানা হয়েছে। বলা হয়েছে, কনটেইনার ডিপোগুলোর মধ্যে বিএম কনটেইনার ডিপোর ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে ভালো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গতকালকে পরিদর্শন করে যা দেখলাম, আগুনের যে চিত্রটা, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের যে কনটেইনারগুলো ছিল, কিছু কনটেইনারে আগুন ধরে গেছে, বিস্ফোরিত হয়েছে। মাঝখানে কিছু কনটেইনারে কিন্তু হয়নি, কিছুদূর পরে গিয়ে আবার কিছু কনটেইনারে হয়েছে। এটা খুব সন্দেহজনক। কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, বিস্ফোরণ হয়ে গেল, অস্বাভাবিক আগুনটা। একটা স্তর বাদ দিয়ে আরেকটা স্তরে আগুনটা ধরেছে। এটা একটা সন্দেহ হচ্ছে।
‘এটা কোন বিস্ফোরক দ্রব্য নয়। এখানে অন্য একটি এ ধরনের ইয়ে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, এমন একটি ইয়ে...। যেহেতু এটা বিস্ফোরক নয়, তাই তাদের এটা ডিক্লেয়ার করার কিছু নেই। ব্যাপারটা এ রকমই। আমরা যাওয়ার আগে এক ধরনের চিন্তা করেছিলাম, যাওয়ার পরে আমরা আরেক ধরনের ব্যবস্থা দেখলাম।’
তাহলে বিস্ফোরণ কীভাবে হলো জানতে চাইলে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সহায়তা করে, এই ধরনের কোন একটা ঘটনা হয়তো ঘটেছে। সে জন্য এখানে বলা হচ্ছে, এটা নাশকতা কিনা। এই মুহূর্তে এটা বলা খুব কঠিন, তদন্তের আগে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে একটি গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সীতাকুণ্ডের এই আগুনের বলে দাবি করেন তিনি। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যদি স্বাভাবিকভাবে বলি- দেখেন গতকালকে একটা ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। এই উদ্বোধনের সঙ্গে এই ঘটনাটা জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের যে আয়োজন এতে যে অর্থটা খরচ হবে সেটা ন্যূনতম।
‘এই অর্থ দিয়ে আগুন মোকাবিলায় হেলিকপ্টার কেনা হবে- গুজব ছড়ানো হয়েছে। মিলিয়ন ডলার এখানে ব্যয়, সেটার সঙ্গে এটা খুবই যৎসামান্য। এটা পপুলার একটি গুজব। এই যে মিলিয়ে দেয়া হলো, পাশাপাশি নাশকতার ধারণা করা হচ্ছে। এটাতে খুবই যোগসূত্র পাওয়া যায়।’
বিষয়টিকে আপনারা কী নাশকতা ধারণা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যেটা দেখেছি, আপনি যদি প্র্যাকটিক্যালি যান, আপনারও এমনটা হতে পারে। সবকিছু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। যেহেতু আমাদের আশঙ্কাটা এখানে এসেছে। যারা তদন্ত করছেন তারা হয়তো এই বিষয়টাও আমলে নেবেন।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, সেই এগিয়ে যাওয়ায় অনেকে ঈর্ষান্বিত। সেই জায়গাগুলোতে অনেকে যুক্ত হচ্ছে কিনা, সেটাও একটা ব্যাপার। তদন্তের মধ্যে বেরিয়ে আসবে, যদি মালিকপক্ষ তদন্তের মধ্যে আসে, গাফিলতি আছে, ডেফেনেটলি আইনের আওতায় আসবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।’