রংপুর শহরের পুরোনো ১৬ কিলোমিটার সড়কজুড়ে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানো নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। সড়কের ওপরের এসব খুঁটি না সরানোর দায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), বিদ্যুৎ বিভাগ বা সিটি করপোরেশন কেউ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যস্ততম সড়কের পাশ থেকে এসব খুঁটি না সরানোয় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটিতে লেগে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। পথচারীরা পড়েছেন ঝুঁকিতে। এ ছাড়া যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
সওজের রংপুর কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের জুনে রংপুর শহরের পুরোনো ১৬ কিলোমিটার সড়কে চার লেন কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এতে ব্যয় ধরা হয় ১২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
এর মধ্যে ভূমি হুকুম দখলের জন্য ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ, বিদ্যুৎ, টেলিফোনের খুঁটি অপসারণ, ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ এবং কেব্ল লাইন সরাতে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে আরও প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই সড়কের উদ্বোধন করেন।
কিন্তু ১২ বছর পর এসেও ১৬ কিলোমিটার সড়কজুড়ে থাকা বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি এখনও সরানো হয়নি।
কলেজ রোডের খামার মোড় এলাকায় সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের বাসায় ঢোকার পথে রয়েছে একাধিক খুঁটি। নগরীর দ্বিতীয় ব্যস্ততম এলাকা লালবাগেও দেখা যায়, একাধিক খুঁটি রয়েছে সেখানে।
এ ছাড়া কলেজ রোডের কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের পাশে, কাচারিবাজার এলাকায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অফিসের সামনেও রয়েছে এসব খুঁটি। এর কোনো কোনো খুঁটি মূল সড়ক থেকে প্রায় ১০ ফিট ভেতরে অবস্থিত। এতে ওই পথে অনেক যানচালক ও পথচারীদের পরতে হচ্ছে বিপদে। খুঁটিকে সাইড দিতে গিয়ে অনেকটা ঘুরে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।
এ সময় কথা হয় অটোরিকশাচালক মো. সাঈদের সঙ্গে। তিনি জানান, সড়কের প্রায় অর্ধেকজুড়ে বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া খুঁটির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীদেরও অসুবিধা হচ্ছে। বেশি সমস্যা হয় লালবাগ ও খামার মোড় এলাকায়। জরুরি ভিত্তিতে খুঁটিগুলো সরানো দরকার।
লালবাগ এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার ওপর খুঁটি থাকার কারণে লালবাগে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই। সব সময় জ্যাম লেগে থাকে। খুঁটি পার হতে না পেরে রিকশা-অটোরিকশা এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। রেলঘণ্টি পড়লে সড়কে হাঁটতে আরও সমস্যা হয়।’
কারমাইকেল কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্রী মনিরা সুলতানা জানান, খুঁটিগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো সরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় দেয়া উচিত। খুঁটিগুলোর সঙ্গে অনেকে সাইকেল হেলান দিয়ে রাখে। অনেক খুঁটির সামনে আবার ভ্যান ও রিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে রাস্তায় জ্যাম বাধে।
খামার মোড়ের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, ‘যখন রাস্তার কাজ হয়, তখন ছিল পৌরসভা। মেয়র ছিলেন মানিক ভাই। আমরা শুনেছি, খুঁটি সরানোর জন্য টাকা বরাদ্দ ছিল। খুঁটি তো সরেনি, টাকা গেল কই। কে খাইল?
এ বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। বিদ্যুতের খুঁটি সরানো বা দেখভালের বিষয়টি তারা দেখবেন। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যেসব সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ছিল, সেগুলো আমরা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিয়েছি। উন্নয়নকাজে যে খুঁটিগুলো সমস্যা করছিল বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়ে সেগুলো সরিয়ে কাজ করেছি।’
রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, ‘সড়কের ওপর কোনো ইলেকট্রিক পোল থাকার কথা নয়। তবে সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর প্রয়োজন হলে নেসকো ও পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করে সরানো হয়।’
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-১) মো. আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ বা সড়ক বিভাগ যারই সড়ক হোক, খুঁটি থাকলে সরাতে আমাদের চিঠি দিতে হয়। একই সঙ্গে খুঁটি সরাতে যে অর্থের প্রয়োজন হবে, সেটাও দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি সড়কটি সওজের। খুঁটি সরাতে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসেনি।’