সাত মাসের সন্তানসম্ভবা জান্নাতুল ফেরদৌস চাঁদনী। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে রোববার তিনিও এসেছিলেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ায় সীতাকুণ্ড থেকেই ফিরে যান।
পরে মুঠোফোনে চাঁদনী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার রাত ১০টার দিকে তার (স্বামী) সঙ্গে ভিডিও কলে আমার কথা হয়েছে। তখন ছেলেমেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। আগুনের কথা বলেছিল। পরে আর কথা হয়নি।’
কথাগুলো বলছিলেন ডিপোর বিস্ফোরণে নিহত ফায়ার সার্ভিসকর্মী ইমরান হোসেন মজুমদারের স্ত্রী। সোমবার সকালে ইমরানের মরদেহ শনাক্ত করেন তার শ্যালক নাজমুল হাসান।
স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় জান্নাতুল ফেরদৌস চাঁদনী বলেন, ‘এখন আমার শরীর খুব খারাপ, কথা বলার শক্তি নেই। ও আগুন নেভাতে গিয়ে নিজেই নিভে গেল। এখন আমাদের কী হবে? মেয়েটা আমার প্রতিবন্ধী, আরও একজন আসবে, কী হবে আমাদের।’
সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯ জন রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মী। রোববার ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও ইমরান নিখোঁজ ছিলেন চারজন। সোমবার সকালে ইমরান হোসেন মজুমদারের মরদেহ শনাক্ত করেন শ্যালক নাজমুল হাসান।
পরিচয় শনাক্তের বিষয়ে নিউজবাংলাকে নাজমুল হাসান বলেন, ‘এমরান ভাইয়ের মুখের ডানপাশের অংশ দেখে আমরা চিনতে পেরেছি। তার কপালের ভাজ ও চেহারার অর্ধেক দেখে চিনতে পেরেছি। ইমরান ভাইয়ের ডান পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
সোমবার কেন শনাক্ত করা যায়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার মরদেহ উপুড় করে রাখা ছিল। সেখানে অনেক মরদেহ ছিল। আমি দূর থেকে সব দেখে চেনার চেষ্টা করেও চিনতে পারিনি। কারণ সামনে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে অন্য মরদেহের ওপর পা দিয়ে যেতে হতো। তাই দ্রুত তাকে শনাক্ত করা যায়নি।’
নাজমুল জানান, নিহত ইমরান হোসেনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। তার ১০ বছরের একটি ছেলে ও ৫ বছর বয়সী মেয়ে আছে। মেয়েটি শারীরিক প্রতিবন্ধী।
শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর দুই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থেকেই ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে।