টাঙ্গাইলের বাসাইলে ৯ বছর বয়সী শিশু তিশা আক্তারকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তিন কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, তিশাকে বাসায় একা পেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে অংশ নেয় প্রতিবেশী তিনজন। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে তারা অচেতন তিশার গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেয় ফ্যানের সঙ্গে। আটকের পর আসামিরা প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, স্থানীয় শহীদ ক্যাডেট অ্যাকাডেমির দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিশা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল ২৬ মে নিজ বাসা থেকে। গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর তিশাকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, তিশার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বন্দে ভাটপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবু ভূইয়া। তিন আসামির বাড়ি পাশেই ভাটপাড়া এলাকায়। তাদের বয়স ১৬ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের একজন পেশায় গাড়িচালক। অন্য দুজন গাড়ির হেলপার ও অটো মেকানিক হিসেবে কাজ করে।
আসামিদের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, শিশু তিশাকে অনেক দিন ধরেই তারা অনুসরণ করছিল। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিশা নাচ করায় সেখানে উপস্থিত থাকত তারা। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় আসামিরা তার গতিবিধি সহজেই অনুসরণ করে আসছিল।
ঘটনার দিন সকালে তিশা ও তার ভাই শুভকে স্কুলে দিয়ে আসেন মা সম্পা বেগম। স্কুল ও কোচিং শেষে দুপুরে তিশা বাড়িতে ফেরে। তবে শুভ না ফেরায় মা তাকে খুঁজতে বের হন। এলাকার ফজলুর দোকানে ছেলেকে বসে থাকতে দেখেন মা। সেখানে দোকানির সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ ও কেনাকাটায় প্রায় ১ ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। এরপর বাসায় ফিরে দেখতে পান উত্তর পাশের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে তিশা। দ্রুত তাকে নিচে নামানো হয়।
প্রতিবেশীদের সহায়তায় তিশাকে অচেতন অবস্থায় নেয়া হয় বাসাইল উপজেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিতে রওনা হন মা সম্পা বেগম। পথে অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হলে তিশাকে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ মে বিকেলে শিশু তিশা মারা যায়। এ ঘটনায় বাসাইল থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।
এদিকে ৪ জুন ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তিশাকে হত্যার আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তথ্য মেলে। তখন তিশার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ধর্ষণ ও হত্যা মামলার পর পুলিশ দ্রুত আসামি শনাক্তের চেষ্টা চালায়।
পিবিআই পরিদর্শক খন্দকার আশরাফুল কবির প্রযুক্তির সহায়তায় রোববার রাতেই তিন আসামিকে চিহ্নিত ও আটক করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিন আসামি অপরাধ স্বীকার করে বিস্তারিত তথ্য জানায়। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে চায় বলে জানিয়েছে পিবিআই।
আসামিদের দেয়া তথ্য অনুসারে, মায়ের অনুপস্থিতি নিশ্চিত হয়েই তারা তিশার ঘরে ঢোকে এবং হাত-মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। তিশা জ্ঞান হারালে আসামিরা ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে তিশার গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগায়। এরপর ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তিশাকে ঝুলিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
আসামি আটকের পর তিশার মা সম্পা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট্ট মেয়েটিকে ফুলের টোকাও দিইনি। ওরা আমার মেয়েকে নির্যাতন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরেছে। আমি এর বিচার চাই।’
বাবা মোহাম্মদ আবু ভূইয়া বলেন, ‘যারা আমার মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’