বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রিত্ব ভোগবিলাসে গা ভাসানো নয়: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৬ জুন, ২০২২ ১৩:০৮

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতাটা আমার কাছে একটা সুযোগ, বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার। এখানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া নয়; বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবার এবং তাদের সেবা দেয়ার একটা সুযোগ হিসেবে আমি মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রিত্ব মানে ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর অর্থ হলো দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মলেন কেন্দ্রে সোমবার সকালে বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সুবর্ণজয়ন্তী ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আমি এটুকু বলতে পারি, আমি কিন্তু মানবতাবোধ দিয়েই এ দেশের মানুষকে কীভাবে সেবা করে যাব, আমার মতো করে, আমি সেই সেবাটাই মানুষকে দিয়ে যাচ্ছি।

‘ক্ষমতাটা আমার কাছে একটা সুযোগ, বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার। এখানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া নয়; বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবার এবং তাদের সেবা দেয়ার একটা সুযোগ হিসেবে আমি মনে করি। কাজেই আপনারাও যে যেখানে, যে প্রফেশনে থাকেন, আপনারা মানবতাবোধ নিয়ে মানুষের পাশে থাকবেন। এটাই হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’

স্বাস্থ্যবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়াতে চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চয়ই আরও মনোযোগী হবেন। আমাদের দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেগুলো থেকে মানুষকে মুক্ত করা, এটাও কিন্তু আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের অনেক ভালো মেধা। আমাদের দেশের চিকিৎসকরা যদি বিদেশে গিয়ে এত ভালো করতে পারে, নিজ দেশে পারবে না কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন। তারা তো দেশে আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন।’

গবেষণা খাতে চিকিৎসকদের সব ধরনের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনাদের অর্জিত জ্ঞান অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য আপনারা কাজ করে যাবেন, মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। আমার পক্ষ থেকে এইটুকু বলতে পারি যে, যত ধরনের সহযোগিতা দরকার জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আপনারা আমার কাছ থেকে পাবেন। এইটুকু কথা আমি দিতে পারি।’

‘চিকিৎসকের কথায় রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়’

চিকিৎসকের ব্যবহারে রোগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাই সেবার ব্রত নিয়েই রোগীদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমি আমাদের চিকিৎসকবৃন্দকে বলব, দেখুন, আপনারা মানুষের সেবা দেন। যখন একজন রোগী ডাক্তারের কাছে যায়, চিকিৎসা, ওষুধের চেয়েও ডাক্তারের দুটো কথা সেটাও কিন্তু মানুষকে অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ করে বা তাদের ভেতর একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে।

‘সেই বিষয়টার দিকেও একটু বিশেষভাবেই দৃষ্টি দিতে হবে যে, এটা শুধু একটা পেশা হিসেবে না; মানুষের সেবা করেন, সেবার ব্রত নিয়ে আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। সেটাই আমরা আশা করি। কারণ ডাক্তারের কথায় রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। সেটা হলো বাস্তবতা।’

স্বাস্থ্য খাতে সরকারের পদক্ষেপ

করোনাভাইরাস মহামারির নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিনা মূল্যে টিকা দেয়াসহ সরকারের নানা পদক্ষেপ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। অনেক বিত্তবানও ওই সময় বিদেশে যেতে না পেরে দেশেই চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা আমাদের একটা শিক্ষা দিয়েছে যে আমাদের বিত্তশালীদের অন্ততপক্ষে আমাদের দেশেও যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারে আমাদের ডাক্তার-নার্সরা, তারাও যে সেবা দিতে পারে, আমাদের ডাক্তাররাও যে এত দক্ষতা রাখেন, অন্তত এই শিক্ষাটা তারা পেয়েছেন।’

জেলায় জেলায় হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা ও আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে এই চিকিৎসাগুলো যাতে মানুষ পেতে পারে, অর্থাৎ হার্ট, কিডনি, বার্ন ইউনিট এই সবগুলো কিন্তু আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে করে দিচ্ছি। এখন আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। চিকিৎসার জন্য শুধু ঢাকায় আসতে হবে না, তারা যেন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাটা নিতে পারে, তার ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিচ্ছি।’

২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ হাজার নার্স ও ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। রোগীদের সেবায় আরও নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শুধু ডিপ্লোমা নয়, নার্সিংয়ে গ্র্যাজুয়েশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘নার্সদের ট্রেনিং দেশের বাইরে থেকে করিয়ে আনা হয়েছে। যেমন: থাইল্যান্ডে, ইন্ডিয়াতে, অর্থাৎ বিভিন্ন দেশে আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

দেশের মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। তা ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ সরকারি-বেসরকারিভাবে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি, কিন্তু সেই সঙ্গে যেতে লক্ষ্য রাখতে হবে চিকিৎসার মানটা, রোগীর সেবাটা। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

ওই সময় চিকিৎসকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ থাকবে, এই বিষয়টা আপনাদের দেখতে হবে। আন্তর্জাতিক মানসম্মত চিকিৎসা যেন আমাদের দেশের মানুষ পায়, আমি জানি জনসংখ্যা অনেক বেশি, চাপ অনেক বেশি, যে কারণে কষ্ট হয় আমাদের ডাক্তারদের…আমি জানি, বিদেশে একজন ডাক্তার কয়জন রোগী দেখেন, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের চাপটা এত বেশি থাকে যে, সেটা করতে সবাই হিমশিম খান, কিন্তু তারপরও আমি বলব চিকিৎসা সেবাটা দেখা দরকার।’

উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি হাসপাতালে ওয়েবক্যাম স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ওয়েবক্যাম আমরা দিয়ে দিয়েছি। এটাকে ভবিষ্যতে আমরা আরও উন্নত করব। সেই পরিকল্পনাটাও আমরা নিয়েছি, বিশেষায়িত চিকিৎসাটা যেন অনলাইনে পেতে পারে।

‘সেই ব্যবস্থাটাই ইতিমধ্যে করা হয়েছে। সেটাকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’

প্রতি জেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল

অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইদানীং কেন জানি না ক্যানসার ও কিডনি রোগটার যেন একটু বেশি প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এ সম্পর্কে মানুষ কীভাবে সচেতন থাকতে পারে, সে বিষয়ে মানুষকে একটু জ্ঞান দান করা দরকার, জানানো দরকার। সেটা আপনারাই করতে পারবেন।

‘পাশাপাশি এই চিকিৎসাটা যেন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি, আমরা প্রতিটি বিভাগেই এ বিষয়ে একটি হাসপাতাল তৈরি করা এবং সেবাটা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। আর বিভিন্ন জেলা হাসপাতালগুলোতে কিডনি ডায়ালাইসিস, অন্যান্য হার্টের চিকিৎসার পরীক্ষার ব্যবস্থা যাতে হয়, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং যথাযথভাবে ডায়াগনসিস করা, এটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটার ওপর আপনার একটু গুরুত্ব দেবেন, সেটা আমরা চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর