চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জন হয়েছে।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার ও সহকারী কমিশনার ওমর ফারুক।
তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘সোমবার সকালে ঢাকা থেকে ফরেনসিক বিভাগের স্পেশালিস্ট টিম এসে ডিএনএ সংগ্রহ করবেন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ২৩ জনের মধ্যে ২২ মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এর আগে ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে জানান, আগুনের ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৪৬ জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, সংকটাপন্ন ১৪ জন রোগীকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশসেরা চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন ও তার টিম আজ চট্টগ্রামে এসে রোগীদের চিকিৎসায় কাজ শুরু করবেন।
শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ টাকার চেক দেয়া হবে। আজ ১৩ জনের পরিবারকে এই টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের ৫০ হাজার ও আহতদের ২৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন সোমবার সকাল পর্যন্ত জ্বলতে দেখা গেছে। আশপাশের কনটেইনার থেকেও ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে সেনা সদস্যরাও রয়েছেন। তবে আগুনের তীব্রতা রাতের চেয়ে কমেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে চার থেকে ছয়টি কনটেইনার আছে, যেগুলোর ভেতরে পানি ঢুকছে না। আমরা কর্তৃপক্ষকে খবর দিয়েছি। তারা দরজাগুলো খুলে দিলে এবং কনটেইনারগুলো নামিয়ে দিলে আশা করছি আর অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নেভানো শেষ পর্যায়ে আনতে পারব।’
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে যোগ দিয়েছে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর থেকে আসা কয়েকটি ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, কনটেইনার ডিপোতে পানির উৎস না থাকায় রাতে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
আগুনের পর বিস্ফোরণ
ফায়ার সার্ভিস জানায়, শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় তারা। এরপর তাদের আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে।
কিছু পরে ঘটনাস্থলে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের আরও সাতটি ইউনিট। ভোরের দিকে আশপাশের জেলা থেকে পাঁচটিসহ ১০টি ইউনিট যোগ দেয়, তবে বিস্ফোরণ অব্যাহত থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আশপাশে যেতে পারেননি দীর্ঘক্ষণ। এর সঙ্গে যোগ হয় পানির স্বল্পতা।
রাত ১১টার দিকে ডিপোতে কনটেইনার বিস্ফোরণ শুরু হয়। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সকাল পর্যন্ত আগুন জ্বলতে থাকে।
ঘটনাস্থল থেকে নিউজবাংলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নূর নওশাদ জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে অনেক বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। ভয়ে অনেকে মালামাল সরানোর চেষ্টা করেন।