একমাত্র ছোট বোনকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিলেন হাবিবুর। গত শুক্রবারও মাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘ওরে মাইরো না, মা। ওরে আমি ডাক্তারি পড়ামু। ওরে নিয়া তোমার চিন্তা করা লাগবে না।’
রোববার কেঁদে কেঁদে হাবিবুরের মা বলেন, ‘গতকাল দুপুরেও আমার সাথে ঘণ্টাখানেক কথা হইছে। তখন কইছে- মাগো, বেতন পাইলে বাড়িতে আমু। আমারে চারদিনের ছুটি দিছে। দুই দিন আইতে যাইতে আর দুই দিন তোমাগো লগে থাকমু। আর তো কিছু কইলো না গো বাবায়।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন ২৫ বছরের হাবিবুর রহমান। ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের সিদ্দিক বেপারির মেয়ের ঘরের নাতি তিনি।
বাবা শাহাবুদ্দিন পটুয়াখালীর বাসিন্দা হলেও ছোটবেলাই তাকে হারান হাবিবুর। বাবার মৃত্যুর পর থেকে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতেই থাকতেন তিনি।
স্বজনরা জানায়, সাত বছর আগে মামা আলমগীরের সঙ্গে জীবিকার সন্ধানে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন হাবিবুর। পরে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরিও পেয়ে যান তিনি। নাইট ডিউটি থাকায় শনিবার রাতে বিস্ফোরণের সময় ওই ডিপোতেই ছিলেন।
হাবিবুরের মা হোসনে আরা বলেন, ‘এই ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল আমার বাবার। ছুটি পায়নি তাই আসতে পারেনি।’
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ওরে কাইড়া নিয়া গেল! এখন আমাদের কি হবে?’
পুত্র হারানো কন্যাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন হাবিবুরের নানা সিদ্দিক বেপারি
অশ্রুসিক্ত হাবিবুরের নানা সিদ্দিক বেপারি বলেন, ‘গতকাল মাগরিবের সময় হাবিবুরের সাথে কথা হইছে। সকালে আমার ছেলে ফোনে জানায় বিস্ফোরণে মারা গেছে সে। এখন আমার মেয়ে আর নাতনীর কী হবে?’
মোবাইল ফোনে হাবিবুরের মামা আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যালের মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত করে হাবিবুরকে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ নিয়ে ভোলার দিকে রওনা দিয়েছি। রাত হবে পৌঁছাতে। মরদেহ অগ্নিদগ্ধ হওয়ায় যতো দ্রুত সম্ভব তাকে বাড়ির ভেতরে কবর দেয়া হবে। জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়নি।’