৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ সিরাজ বিএম কনটেইনার ডিপোয় ক্লিনার হিসেবে চার বছর ধরে কাজ করছেন। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ডিউটি শেষ করে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। রাত ৯টার দিকে আগুনের খবর পেয়ে ছুটে যান কর্মস্থলে। সেখানে যাওয়ার পর বিকট শব্দের বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন ১০০ গজ দূরে৷
মিনিট দশেক ঘোরের মধ্যে কাটে তার। বুঝতে পারছিলেন না কী হয়েছে। পরে সিকিউরিটি গেটের পাশের বালতিতে থাকা পানি শরীরে ঢেলে দেন তিনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তা যান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
আগুনে ঠোঁট ও বাম হাত ঝলসে গেছে তার। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছিল। তবু রোববার সন্ধ্যায় নিউজবাংলার কাছে তুলে ধরেন বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা। তিনি বলেন, ‘ডিপোর ১ নম্বর গেটের দক্ষিণ পাশে স্কেলের সঙ্গেই তিনটি কনটেইনার একটির ওপর একটি ছিল। এই স্তূপ করা কনটেইনারের নিচে হঠাৎই ধোঁয়া দেখতে পাই। আগুন খুব একটা ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের প্রথম গাড়িটি এসে পানি মারতেই আগুন বেড়ে যায়।
‘এর মিনিট দুয়েকের মধ্যেই বিস্ফোরণ। আগুন লাগার আগে ধোঁয়া কীভাবে হলো তা কেউই দেখেনি। তবে আমার ধারণা, ডিপোয় আসা চালক-সহকারীদের সিগারেটের ফেলে দেয়া জ্বলন্ত অংশ থেকেই আগুন লেগেছে৷’
তিনি বলেন, ‘কনটেইনারগুলোয় কেমিক্যাল ছিল। এসব কেমিক্যাল ফর্ক লিফট মেশিনের মাধ্যমে কনটেইনারে লোড করা হয়ে থাকে। প্রায় সময় আমাদের ডিপোয় এসব রাসায়নিক আনতে দেখি আমরা। কিন্তু এভাবে আগুন থেকে এসব কেমিক্যাল বিস্ফোরিত হবে তা জানা ছিল না কারও৷’
বার্ন ওয়ার্ডে কথা হয় মোহাম্মদ রাব্বী নামে ১৯ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে। তিনি পেশায় কাভার্ড ভ্যানচালক। শনিবার বিকেলে রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাক নিয়ে ঢাকা থেকে বিএম ডিপোয় যান তিনি। সেই যাওয়াই কাল হয়েছে তার। আগুন ও বিস্ফোরণে দুই হাত-পা ও মুখ ঝলসে গেছে৷ তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের সময় কনটেইনার থেকে খুব কাছেই গাড়িতে ছিলাম আমি। হঠাৎ করে বিকট শব্দে আগুনের শিখা এসে আমার শরীরে পড়ে। এর আগে ধোঁয়া দেখে গাড়ি নিয়ে বের হতে চাইলেও সিকিউরিটিরা বের হতে দেয়নি৷
‘‘দগ্ধ হওয়ার পর আমি গাড়ি ছাড়া বের হতে চাই। তখন সিকিউরিটি গার্ড বলেন, ‘আমরা মরলে একসাথে মরব, বাঁচলে একসাথে বাঁচব।’ গেটে দড়ি টেনে দেয়া হয়। পরে পালিয়ে গিয়ে আমি ঝাঁপ দিই পাশের মসজিদের পুকুরে৷ এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে পাঠানো হয় আমাকে।’’
রাব্বীর বেডের পাশেই নির্বাক চোখে সন্তানের দিকে চেয়ে আছেন মা আমেনা খাতুন। তার সঙ্গেও কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘৯টার দিকে আমার ছেলে মোবাইলে ফোন করে জানায় আগুনে পুড়ে গেছে সে৷ পরে দ্রুত ছুটে আসি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোয় শনিবার রাতে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীও রয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, নিহতদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।