দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সপ্তাহব্যাপী বুস্টার ডোজ কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে রোববার টিকাকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল কম। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে প্রচারণা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষকে তৃতীয় ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ হিসাবে দিনে ২০ লাখ মানুষকে বুস্টার দিতে হবে। কিন্তু প্রথম দিন শনিবার ১২ লাখের মতো মানুষ টিকা নেন। দ্বিতীয় দিনেও অধিকাংশ টিকাকেন্দ্রে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে বলে মানুষ টিকা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংক্রমণের প্রকোপ বাড়লেও দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে টিকায় আস্থা বাড়লেও বুস্টার ডোজ নিতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে।
প্রচারের অভাবকে দায়ী করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। একই সঙ্গে মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করে তুলতে বাড়ানো হবে প্রচার-প্রচারণা। তবে সময় বাড়ছে না এই ক্যাম্পেইনের।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ নিতে আসেন আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা। তিনি জানান, দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দিন তাকে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তখন ভিড় ছিল খুব। তবে বুস্টার ডোজ নিতে কোনো ধরনের ঝমেলা পোহাতে হয়নি।
এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মো. দাউদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘রোববার বেলা ২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৪৮ জনকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। আগের দিনও এমন সংখ্যক মানুষ টিকা নেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে টিকা নিচ্ছেন না। তারা মনে করছেন টিকা নেয়ার আর দরকার নেই। এ ছাড়া অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। এ অবস্থায় টিকা নেয়ার পর বিশ্রামের সুযোগ পাবে না বলে অনেকেই টিকা নিচ্ছেন না।
‘আমার কেন্দ্রে প্রথম দুই ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বুস্টার নিয়েছেন। বর্তমানে এখানে যারা আসছেন, তারা অধিকাংশই অন্য কেন্দ্র থেকে আসা। টিকাকেন্দ্রে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে ক্যাম্পেইন বেশি বেশি হওয়া দরকার।’
শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন টিকা নিতে এসেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার বলেন, ‘বুস্টার ডোজ দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। তালিকাভুক্ত টিকাগ্রহীতাদের মোবাইলে মেসেজ দেয়া হয়েছে। রোববার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজসহ ৮০ জনকে ফাইজার, ১৬৫ জনকে মর্ডানা এবং ২৫ জনকে সিনোভ্যাক টিকা দেয়া হয়েছে। মোট ২৭২ জন টিকা নেন। আগের দিন ২৩৩ জন টিকা নেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। টিকাগ্রহীতার ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশকে বুস্টার ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়া সাড়ে চার কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় আছেন। বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ক্যাম্পেইন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক বলেন, ‘ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। অনেকেই নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
‘রোগের প্রকোশ বেশি থাকলে মানুষ সেই বিষয়ে সচেতন বেশি হন। তখন সেবা নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। করোনার সংক্রমণ আবার বাড়লে তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নিতে আসবেন।’
বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ছে না জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘লক্ষ্য পূরণ না হলেও বাড়বে না ক্যাম্পেইনের মেয়াদ। ১০ জুনের মধ্যে এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়ানো হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ১৬ হাজার ১৮১ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৬২৩টি স্থায়ী কেন্দ্র ও ১৫ হাজার ৫৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্র। স্থায়ী কেন্দ্রগুলোয় সাত দিন ও অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোয় দুই দিন টিকাদান কার্যক্রম চলবে। একযোগে ৪৫ হাজার ৫৩৫ জন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত আছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার পর চার মাস পার হয়েছে, ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের নাগরিকদের সবাই বুস্টার ডোজ পাবেন।