বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে আপিল বিভাগের ঘোষিত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
তবে অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, রিভিউ করার সে সুযোগ নাই। রিভিউ করতে হলে জোবাইদাকে হাজির হতে হবে। পলাতক থেকে রিভিউ করার কোনো সুযোগ নাই।
রোববার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মামলার শুনানির সময় দুইপক্ষের আইনজীবী এমন তথ্য জানান।
পলাতক অবস্থায় তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের রিট চলবে কি না আদালতের এমন জিজ্ঞাসার উপর দুইপক্ষ শুনানি করে। পরে আদালত শুনানি অসমাপ্ত রেখে আগামী ১২ জুন রোববার পর্যন্ত মুলতবি করে।
আদালতে তারেক রহমান ও জোবাইদার পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন কায়সার কামাল।
দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
শুনানির শুরুতেই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তারেক-জোবাইদার আইনজীবীর কাছে জানতে চান পলাতক আসামির পক্ষে শুনানির সুযোগ আছে কি না।
জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট যখন এ মামলার রায় ঘোষণা করে তখন তার মক্কেলদের পলাতক না দেখিয়েই রায় ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মক্কেলরা আইনের চোখে পলাতক নন। কারণ, তারেক রহমান ওকালতনামা দেয়ার পরই হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। যেহেতু তিনি আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং জোবাইদা রহমান হাইকোর্টে হাজির হওয়ার পরে তার রিট করেছিলেন।’
তখন বিচারক বলেন, ‘আপিল বিভাগ তো তাকে পলাতক ঘোষণা করেছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করব। আমরা ওকালতনামা নিয়েই রিভিউ করব। এরই মধ্যে আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি চেয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘তারা রিভিউ করতে পারবেন না। তারা ওকালতনামা পাবেন কোথায়? তাছাড়া পলাতকদের পক্ষে রিভিউ করার কোন লোকাস স্টান্ডি (এখতিয়ার) নাই।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘তাহলে তাদেরকে আমরা শুনতে পারব কি না?’
রাষ্ট্রের আইনজীবী বলেন, ‘এটা শুনে আর লাভ কী? ওনারা (আসামিরা) তো পলাতক।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান দুর্নীতির মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ না করেই রিট জমা দিয়েছেন এবং হাইকোর্টে তার আবেদনের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘গত ১৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জোবাইদা রহমানকে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক ঘোষণা করে। এ অবস্থায় এ মামলার শুনানি করার সুযোগ নাই।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘তারেক রহমান তিনটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তাকে মানিলন্ডারিং মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড, ২০১২ সালে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও মামলার বিষয়ে কোনো আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি তিনি।’
তিনি বলেন, ‘দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরোয়ানা মুলতবি রয়েছে এবং তাই তিনি দুর্নীতির মামলায় আইনের চোখে পলাতক। এ অবস্থায় পলাতক আসামিদের পক্ষে মামলা শোনার কোনো সুযোগ নাই।’
এ সময় বিএনপির আরেক আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে বক্তব্য দিতে চাইলে আদালত আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করে।
গত ১ জুন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে রায় দেয় আপিল বিভাগ।
চার দিনের মাথায় সকালে আপিল বিভাগের রায়ের কপি হাইকোর্টের এই বেঞ্চে দাখিল করে দুদক।
২০০৮ সালে হাইকোর্ট জোবায়দা রহমানের আবেদন শুনে আদেশ দেয়।
ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এ মামলা করা হয়।
মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
একই বছর তারেক রহমান ও তার স্ত্রী আলাদা রিট আবেদন করেন। রিটে জরুরি আইন ও এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেয়।
রুল জারির ১৫ বছর পর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ এপ্রিল রিট মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ২০ এপ্রিল দিন ঠিক করে। ওই দিন তারেক ও জোবাইদার পক্ষে সময় আবেদন করায় তা পিছিয়ে যায়।