দুর্নীতির দুই মামলার সাজা স্থগিত হওয়ার পর শর্ত সাপেক্ষে কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে আইনি কোনো বাধা নেই বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য আয়োজিত ১৪৬তম রিফ্রেসার কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যাপারে দুটি শর্ত আছে, তা হলো তিনি বাংলাদেশের ভেতরে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন আর বিদেশে যেতে পারবেন না। সে কারণে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় তাকে দাওয়াত দিতে আইনি কোনো বাধা নেই।’
আগামী ২৫ জুন দেশের সবচেয়ে বড় সেতু উদ্বোধনের আয়োজনটি জমকালো করতে চাইছে সরকার। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার নানা বাধা অতিক্রম করে এই সেতুটি নির্মাণ করেছে।
এই সেতু নিয়ে নানা সময় নেতিবাচক মন্তব্য করার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দেয়ার কথা বলে তুমুল আলোচনা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই মন্তব্যের কারণে বিএনপি বিক্ষোভও করেছে।
তবে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্য সব দলের পাশাপাশি বিএনপি ও তার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন ওঠে যে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও একই বছরের অক্টোবরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় রাষ্ট্রীয় এই আয়োজনে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতির কোনো বাধা আছে কি না।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে এই সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিএনপি নেত্রী তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরে গেছেন। এরপর তিনি অসুস্থ জানিয়ে একাধিকবার দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করে তার পরিবার। কিন্তু দণ্ডিত হওয়ায় তাকে বিদেশে নেয়ার আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় দাওয়াত দেবে। এ বিষয়ে আইনি কোনো বাধা নেই বলে আমি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে সকালে জানিয়েছি।’
বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিদ্বেষের বশীভূত হয়ে কারও প্রতি কোনো অ্যাকশন নেন না। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ও তার পুত্রদ্বয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেয়া হয়েছিল। সেগুলো দুদকের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
‘তারা (বিএনপি) যদি এটা বলে যে আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলো করেছে, তাহলে আমার মনে হয় যে তারা শুধু শুধু আওয়ীমী লীগ সরকারকে দোষারোপ করছে। তাদের দোষারোপ করাটা ভিত্তিহীন।
‘দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। ২০০৪ সালের আইনের পর ২০০৬ পর্যন্ত দুদককে চেয়ার-টেবিলও দেয়নি বিএনপি সরকার। ২০০৭ সালে এটাকে প্রকৃত কার্যকর করা হয়েছে।’
বিচার বিভাগের বাজেটের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তিসংগত যেকোনো প্রয়োজনে অর্থ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় কার্পণ্য করবে না। জাতীয় বাজেটে আইন মন্ত্রণালয়কে যে টাকা দেয়া হয়, তা আগে কোনো সরকার দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই প্রথম বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
‘সুপ্রিম কোর্টে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের একটি অংশ বাস্তবায়নের জন্য ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এটা আইন মন্ত্রণালয়ের নামে বরাদ্দকৃত মূল বাজেটের বাইরে।’