দেশের রপ্তানি আয়ের সর্ববৃহৎ খাত তৈরি পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয়ে আর প্রণোদনা দেয়া দরকার নেই বলে মনে করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংস্থাটি বলেছে, প্রণোদনা কোনো স্থায়ী কাঠামো নয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি দেয়া উচিত।
রোববার বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২১-২২: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ কথা বলেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জাম হোসেন।
প্রবাসীদের দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে বর্তমানে রেমিট্যান্সের ওপর আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয় সরকার।
ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে প্রবাসীরা। আগে এক ডলার পাঠালে ৮৯ টাকা পেত তারা।
দেশীয় টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়নের ফলে এখন তারা পাচ্ছে ৯৬ টাকার বেশি। তার ওপর পাচ্ছে সরকার থেকে বাড়তি আড়াই শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা। এতে সরকারের চার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি লাগছে বছরে।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে বলেছেন, ভর্তুকির চাপ প্রশমিত করতে প্রবাসীদের দেয়া প্রণোদনা স্থগিত রাখা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ড. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় প্রবাসীরা তো একটু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। কাজেই রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা না দেয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।’
শুধু বিনিয়োগ কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীল খাতে প্রণোদনা রাখা যেতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, এই মুহূর্তে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি বর্তমানে পোশাক খাতে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়।
সিপিডির খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে পোশাক শিল্পে ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তার মানে, এ শিল্পের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্পে আর প্রণোদনার দরকার নেই। তিনি মনে করেন, যেকোনো প্রণোদনা কাঠামো চিরস্থায়ী নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি নির্ধারণ করা উচিত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, এখন সময় এসেছে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো।
কারণ এই শিল্পের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের এখন গ্যাস সরবরাহের দিকে সরকারকে বেশি নজর দিতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পণ্যমূল্য স্থির রাখা যাবে। এ জন্য বাজার তদারকিতে বেশি নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের ক্রয়-ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে করে তাদের ওপর চাপ কিছুটা প্রশমিত হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার কত তা বলা কঠিন। এটা বের করতে হলে জরিপ করতে হবে।
চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংস্থাটি বলেছে, প্রবৃদ্ধির এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। জিডিপির হিসাবে গলদ আছে বলে মনে পড়ে সিপিডি।
কার্যকর নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন করে জিডিপির হিসাব নিরূপণের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।
বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে সেটি আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি বলে মনে করে সিপিডি।
সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যে হার বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ এটি দিয়ে বাজারের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলন হয় না।
সিপিডি বলেছে, ‘মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তারা কষ্টে আছে।
এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিডি।