চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণ মনে করিয়ে দিচ্ছে বছর দুয়েক আগে লেবাননের বৈরুতে বন্দরে ঘটে যাওয়া এমনই এক ঘটনার কথা।
শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভাটিয়ারীর কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপো নামের এক কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর রাসায়নিকের কনটেইনারে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। কেঁপে ওঠে ওই এলাকা।
এই আগুন ও বিস্ফোরণে অন্তত ৩২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে।
২০২০ সালের ৪ আগস্ট বৈরুতে বন্দরের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় ১৯০ জনের প্রাণ, আহত হয় ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। শহরের অর্ধেকই ধূলিসাৎ হয়ে পড়ে।
দুই দুর্ঘটনায় প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে। ভাটিয়ারীতেও উড়ে গেছে ডিপোর ছাউনি। চারদিকে শুধু ধুয়ার কুণ্ডলী।
বৈরুতের বিস্ফোরণের পেছনে যেমন রাসায়নিক দ্রব্য, ভাটিয়ারীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতেও বড় ভূমিকা রেখেছে রাসায়নিক দ্রব্য হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছাড়া আরও কিছু রাসায়নিক সেখানে থাকতে পারে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি।
‘এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। আমরা এই পদ্ধতিতে এবং ফোমের মাধ্যমে এখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি।’
তিনি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও বারবার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ডিপোতে রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে।
রাসায়নিকের কারণে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকে।
কী ঘটেছিল বৈরুতে
বন্দর এলাকার ওই বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছিল। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড়ু গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যায়।
যে স্থানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বন্দরের গুদাম ছিল। এতে মজুত ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। গুদামে হাজার হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ঝুঁকি নিয়ে লেবাননের কর্মকর্তারা আগে থেকেই জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণের জন্য দায়ী অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আসলে লেবাননের নয়, বরং রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে করে এগুলো লেবাননে পৌঁছেছিল।
দুর্ঘটনার ছয় বছরেরও বেশি সময় আগে মোজাম্বিকে যাওয়ার পথে রুশ জাহাজ ফুটো হয়ে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে আশ্রয় নেয়। এতে বহন করা হচ্ছিল ২ হাজার টনের বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। সার বানাতে কিংবা বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার হয় এই রাসায়নিক।