পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ তুলে যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংক পাচ্ছে বাঙালির স্বপ্নের এ সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ।
শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে নারী গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ-পরবর্তী সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অনেক প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমি বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা তাদের চিঠি দিব।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কে পক্ষে, কে বিরুদ্ধে আমি দেখব না। রাজনৈতিক দলও, যারা বিরোধিতা করছে তাদেরকেও চিঠি পাঠাব। আমন্ত্রণ জানাব। এটা প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন।'
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। ওই দিনই যান চলাচলের জন্য খুলবে সেতু।
পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এই সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর অর্থায়ন জটিলতায় সেতুটি আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন নিজ অর্থে সেতু করার।
তার এই সিদ্ধান্তের পর দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এত বড় প্রকল্প নিজে নিজে করার মতো আর্থিক সামর্থ্য বাংলাদেশের হয়নি। এতে রিজার্ভ চাপে পড়বে, অন্য উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে।
বিশ্বব্যাংক এই অভিযোগ তোলার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অভিযোগকে মিথ্যা বলে আসছিলেন। বিশ্বব্যাংক সে সময়ের যাতায়াতমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি জানানোর পর আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক আখ্যা দেন শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাংক সে সময় কানাডার একটি আদালতে পদ্মা সেতু নিয়ে মামলা করে। সে দেশের কোম্পানি এসএমসি লাভালিন এই দুর্নীতিচেষ্টায় জড়িত ছিল- এমন অভিযোগে করা মামলাটি ২০১৭ সালে উড়িয়ে দেয় অন্টারিওর একটি আদালত। বিচারক বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলেও উড়িয়ে দেন।
শনিবার সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাওয়াত পাবেন কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কাউকে দাওয়াত দেব না বলিনি। নিয়মের মধ্যে পড়লে অবশ্যই খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দেব। এখন উনি তো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে দাওয়াত পাওয়ার কথা। তবে আমরা নিয়ম জেনে তারপর দাওয়াত দেব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির নেতারা দাওয়াত পাবেন। তাদের অন্য শরিক দল বাম, ডান সবাইকে দেব। তারা আসা না আসা বড় কথা না, আমরা তাদের দাইয়াত দিচ্ছি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আপনাকে সংযত হয়ে কথা বলতে বলেছেন’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ কথা তো আমিই তাকে বলেছি। তিনি আবার আমার কথাই আমাকে বললেন কেন। কারণ তারা আন্দোলনের নামে রাস্তার ভাষায় কথা বলছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তারা পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার বলছে। দেশে-বিদেশে ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি করবে, এ ধরনের বক্তব্য-স্লোগান তারা দিচ্ছে।
‘আমি বলেছিলাম ফখরুল সাহেবকে, আপনার দলের এই তরুণ তুর্কিদের সামলান। এ ধরনের স্লোগান দিলে, হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি পরিণাম হবে ভয়াবহ। এ কথা আমি বলেছিলাম। যেভাবে চালাচ্ছেন, এভাবে যদি চলতে থাকে পরিণতি কী হবে দেখতে পাবেন। পরিণতি কার খারাপ হবে সেটা বাস্তবেই দেখতে পাবেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি দলটা একটা বড় দল। নির্বাচনে আসুক। প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরা চাই। ক্ষমতার পরিবর্তন চাইলে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। এখন নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা যদি মনে করেন হত্যা-সন্ত্রাস এই পথে থাকবেন, যদি মনে করেন শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার মসনদে বসবেন তাহলে এই রঙিন খোয়াব দুঃস্বপ্ন।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির কিছু নেতা আবোলতাবোল বকছেন, তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাথা খারাপ হয়েছে কারণ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলকে তারা সহ্য করতে পারছে না।
‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিড তারা জীবনে দেখেও নাই, করেও নাই। শেখ হাসিনা করছেন, এ জন্য তাদের বুকে বিষ ব্যথা। ব্যথা আর জ্বালায় জ্বলছে। এ কথাগুলোর মূল্য নেই। তারা হিংসায় এসব উদ্ভট কথা বলছে।’