বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অন্য প্রার্থীর এজেন্টকে হত্যার হুমকি নৌকার মুজিবুলের

  •    
  • ৪ জুন, ২০২২ ১৫:৩২

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রথম ভিডিওটি কমিশনে পাঠিয়েছি। এটার একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দ্বিতীয় ভিডিওটিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েছি আমরা। আর এখন যে ভিডিওর কথা বলছেন, সেটা দৃষ্টিগোচর হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ইভিএম চাপতে ভোটের গোপন কক্ষে কর্মী রাখার ঘোষণা দিয়ে সমালোচিত নৌকা মার্কার প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বিতর্কিত বক্তব্যের আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, কেন্দ্রে অন্য প্রার্থীর এজেন্ট থাকবে না। আর থাকলেও গলা টিপে হত্যা করবেন। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন করলে তাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়ারও হুমকি দেন তিনি।

চট্টগ্রাম বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছেন মুজিবুল হক চৌধুরী। আগামী ১৫ জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মার্কা নৌকা নিয়ে ভোটে লড়বেন তিনি। ভোট সামনে রেখে নির্বাচনি প্রচার সভায় একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি।

গত সোমবার ‘ইভিএম না হলে ভোট আমি মেরে দিতাম’ নির্বাচনি প্রচারের এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এই ভিডিওর সত্যতা জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী বুধবারের মধ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার মুজিবুলের ৫৪ সেকেন্ডের আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে নিজেই ইভিএমে অন্যের ভোট দিয়ে দেবেন বলেন এবং সেটিকেই সুষ্ঠু নির্বাচন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন তার ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে বলে দাবি করেন নৌকার এই প্রার্থী।

এরই মধ্যে এই প্রার্থীর নির্বাচনি সভায় দেয়া বক্তব্যের আরও একটি ভিডিও নিউজবাংলার হাতে এসেছে।

৩৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওর পুরো সময়টাতে আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। ভিডিওটির ৫৫ সেকেন্ডে অন্য কোনো প্রার্থী নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট দিলে তাকে গলা টিপে হত্যা করার হুমকি দিতে শোনা যায় তাকে।

বক্তব্যের শুরুর দিকে মজিবুল বলেন, ‘এই বাঁশখালীতে, আমার চাম্বলে ৭৩টি জামে মসজিদ আছে। তৎমধ্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিজ্জির পুকুরপাড়ে একটা জামে মসজিদ ছাড়া সব জামে মসজিদে আমি অনুদান দিয়েছি। যেখানে কম দিয়েছি, সেখানে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি।

‘এর বাইরে প্রতি বছর অনুদান দিয়েছি। তাহলে আমি আপনাদের বাইরে কোথাও দেই নাই। সেই জায়গায় অন্য প্রার্থীর এজেন্ট থাকেলে সেটা আমি কেমনে বরদাশত করব?

‘তাহলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন, আগামী ১৫ তারিখের নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড, ১ নম্বর ওয়ার্ড আর ৯ নম্বর ওয়ার্ড; আজ থেকে কসম খেয়ে ফেলবেন, কোনও প্রার্থীর এজেন্ট থাকবে না। যদি থাকতে মনে চায়, এর আগে গলাটিপে মেরে ফেলব।’

একই বক্তব্যে নিজের নির্বাচনি এলাকায় কেউ নির্বাচন করলে পিঠের চামড়া রাখবেন না বলেও হুমকি দেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘কোনও চেয়ারম্যান লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা মসজিদ মাদ্রাসায় দিয়েছিল? আমি মুজিবুল হক চৌধুরী দিয়েছি।

‘আমার কী জন্য দুঃখ লাগে জানেন? বারবার গিয়াসউদ্দিনের কথা কেন বলতে হয় জানেন? দুঃখ একটাই। ৫ বছর তোরা চেয়ারম্যানে দাঁড়াবি না বলবি। কী জন্য জানেন? কারণ মসজিদ-মাদ্রাসায় ৫ টাকা দান করতে হবে, কারো অসুখ হলে ৫০০ টাকা দিতে হবে বলে, কারও মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে হবে। তোরা কিসের ভোট করছিস যে, পিঠের চামড়া রাখব বলে মনে হয়?’

তবে শুক্রবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৫৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ৩৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটির অংশ বলে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা। নিউজবাংলার হাতে আসা ৩৩ মিনিটের ভিডিওর ১০ মিনিট ২৯ সেকেন্ড থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি শুরু হয়।

সম্পূর্ণ ভিডিওটি ২৩ মে রাতে চাম্বল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনি কর্মীসভার বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ওই সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী।

এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হককে ফোন দেয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন কেরে দেন তিনি। তবে আগের ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, তিনি বক্তব্যে এ ধরনের কথা বলেননি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফয়সাল মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রথম ভিডিওটি কমিশনে পাঠিয়েছি। এটার একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দ্বিতীয় ভিডিওটিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েছি আমরা। আর এখন যে ভিডিওর কথা বলছেন, সেটা দৃষ্টিগোচর হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আগে ছড়ানো ভিডিওতে যা ছিল

এর মধ্যে মজিবুল হক চৌধুরীর দুটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রথমটি ছড়ায় গত সোমবার। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী মুজিবুল এক সমাবেশে নিজের কর্মীদের বলেন, ব্যালটে ভোট হলে তিনি সহজেই সব ভোট দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু যেহেতু ইভিএমে ভোট হবে, তাই তার অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘তো এখানে ইভিএম একটা করেছে সরকার। তো কী করতাম। একটু কষ্ট করে গিয়ে আঙুলে চাপ দিয়ে ভোট দিতে হবে। চাপ দিতে না পারলে চাপ দেয়ার জন্য সেখানে আমি মানুষ রাখব। তো আমাকে একটু দোয়া করবেন সকলে। রিকশা করে পারেন, যেভাবে পারেন ভোটটা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। কারণ, ইভিএমের ভোট। ইভিএম না হলে আমি কাউকে খুঁজতাম না, ভোট আমি মেরে দিতাম। যেভাবে পারি ভোটটা মেরে দিতাম।

‘ইভিএমে আইডি কার্ড ঢুকিয়ে দিতে হয়, নইলে হয় না। এটা না হলে আমি রাতেই নিয়ে ফেলতাম। তো আপনারা একটু কষ্ট করেন, আপনাদের একটু কষ্ট করে ওটা নিয়ে যেতে হবে। গিয়ে মেশিনে ফিঙ্গার দিতে হবে। কথা বোঝেননি?’

মুজিবুলের দ্বিতীয় ভিডিওটি ছড়ায় শুক্রবার। এই ভিডিওটি মূলত নিউজবাংলার হাতে আসা ৩৩ মিনিটের ভিডিওর খন্ডাংশ। সেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, ‘ভোট সুষ্ঠু করি যে আমরা, অসুষ্ঠু করি যেও আমরা। আমরা বললে সুষ্ঠু, না বললে অসুষ্ঠু। যেদিকে দেখি, সেদিকেই।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে হওয়া বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “পৌরসভার ভোটের সময় আমাকে এক বিএনপি নেতা ফোন দিয়েছিল। বলে যে, ‘আমাকে মারতেছে, এভাবে গালি দিচ্ছে।’ আমি বললাম, ‘কেন কথা বলতেছ, কথা বলিও না।’ সে বলে যে, ‘কেউ কেউ বলতেছে কামরুল (স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী) মেয়র হবে, সুষ্ঠু ভোট হবে।’ আমি বললাম, ‘সুষ্ঠু ভোট হবে সরকার লিখিত দিয়েছে নাকি?’ সে বলতেছে, ‘কেন, ইভিএমে ভোট হবে।’ আমি বলছি, ‘ইভিএমে নিতে (ভোট) পারে না?’ সে বলে যে, ‘না।’ আমি বললাম, ‘তোমার আঙ্গুল, টিপ দেব আমি। এটা হলো সুষ্ঠু ভোট। আমাদের এগুলো জীবনেও জিজ্ঞেস করতে হবে না’।”

এ বিভাগের আরো খবর