এক যুবককে প্রেমিক দাবি করে বিয়ে করতে মরিয়া তরুণীর সঙ্গে এবার যোগ দিয়েছেন তার মা। মা-মেয়ে দুজনই শুরু করেছেন অনশন।
ঢাকা থেকে মা খাকিরুন বেগমকে নিয়ে এসে শুক্রবার বিকেল থেকে তারা মাগুরা সদর উপজেলার মঘী ইউনিয়নে তাজনুর হোসেন নামের যুবকের বাড়িতে অনশন শুরু করেছেন। বিয়ে না করা পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়েছেন।
খাকিরুন নিউজবাংলাকে জানান, তিনি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। স্বামীর সঙ্গে অনেক দিন আগেই বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে মেয়েকে নিয়েই থাকেন। মেয়ের কাছ থেকেই তাজনুরের সঙ্গে তার প্রেমের বিষয়টি জেনেছেন।
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমার মেয়ে একা এসেছিল বিয়ের দাবিতে। এখন আমি এসেছি। তারা তখন কথা দিয়েছিল অভিভাবক আনলে কথা বলবে। আমি তাই ছুটি নিয়ে মেয়ের সঙ্গে এখানে এসেছি। এই বারান্দায় বসে আছি, কেউ কথা বলছে না। মেয়ের বিয়ে না দিয়ে আমি এখান থেকে যাব না।’
১৭ বছর বয়সী ওই তরুণী বলেন, ‘ছেলে রাজি আছে বিয়ে করতে। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, কিন্তু তার বাবা-মা কেউ রাজি না। তারা আমাকে পছন্দ করে না।
‘না করুক, আমার দরকার ছেলেকে। তারা বিয়ে দিলেই তো সব ঠিক হয়ে যায়। বিয়ে না দিলে এবার আমার মাও এখান থেকে যাবে না।’
- আরও পড়ুন: বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি
ওই তরুণী মাকে নিয়ে আসার পর বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তাজনুরের পরিবার।
তাজনুরের চাচা স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক বাবুল হোসেন জানান, ছেলের পরিবার গ্রামেই আছে। তারা লোকলজ্জার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনিই মা-মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাবুল বলেন, ‘এভাবে বিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তারা যেন এখান থেকে চলে যায়। ছেলের বাবা-মা এ বিয়েতে রাজি না। তারা বিয়ের দাবিতে এলেও ছেলের চাচাত এক ভাই সাগরকে ঢাকায় আটকে রেখেছে। বিয়ে না দিলে সাগরকে ছাড়বে না বলে জানিয়েছে। আমরা খুব বিপদে পড়ে গেছি।’
সাগরের বিষয়ে তরুণীর মা বলেন, ‘সাগর ছেলেটা সবকিছুর জন্য দায়ী। সে সব জানে। আমার মেয়ের সঙ্গে তাজনুরের প্রেমের সম্পর্ক কতটা তা সাগর জানে। আমাদের প্রমাণ সে। এ জন্য তাকে ঢাকায় নিরাপদে আটকে রেখেছি। এখানে বিয়ে হলে তাকে গিয়ে ছেড়ে দেব।’
ওই তরুণী প্রথমে গত ২২ মে সন্ধ্যায় তাজনুরের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেন। তার বাড়ি তাজনুরের পাশের ইউনিয়ন রাঘবদাউড়ে। থাকেন মায়ের সঙ্গে ঢাকায়।
সে সময় তিনি জানান, ৯ মাস ধরে তাজনুরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক চলছে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে তিনি ছেলেটিকে বিয়ের কথা বললে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। এরপর তিনি ঢাকায় তাজনুরের কর্মস্থলে যান। সেখান থেকে ২২ মে দুজন মিলে মঘীতে ফিরে আসেন।
ছেলের পরিবার তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। তারা মেয়েটিকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এতে মেয়েটি ১২ ঘণ্টা অবস্থানের পর বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে মাকে আনতে যান।
এ বিষয়ে মঘী ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য তোরাব আলী বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম এরকম একটা ঘটনা আমার এলাকায় ঘটেছে। একটা মেয়ে নাকি বিয়ের দাবিতে তার মাসহ এসেছে। আমাকে যদি ডাকে তাহলে আমি সেখানে যাব।’
ছাকিরুন শনিবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই ছেলের পরিবারের কেউ আমাদের কিছু জানায়নি। স্থানীয় মাতবররা আমাদের চাপ দিচ্ছে যেন আমরা চলে যাই। আমার মেয়ের বিয়ে না দিয়ে আমি যাব না।
‘আমরা শুধু পানি খেয়ে আছি। একটা সমাধান না করলে আমরা কিছু খাবও না। তারা যদি আজকের মধ্যে রাজি না হয় তাহলে স্থানীয় থানায় যাব মামলা করতে।’