আগামী জাতীয় নির্বাচনের বাকি এখনও প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে রাজপথে। ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে আগেই। সম্প্রতি বিরোধী দলগুলো নিজেদের ঐক্য সুদৃঢ় করতে মাঠে নেমেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে ‘প্রতিহত’ করা নিয়ে হাঙ্গামা হয়েছে। শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘৭৫-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগান দিয়ে পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ কারণে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
এ অভিযোগের ধারাবাহিকতায় মাঠে নেমে পড়েছে আওয়ামী লীগও। মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল এবং দিবসভিত্তিক কর্মসূচি দিচ্ছে দলটি।রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এসবই আগামী নির্বাচনের আগে উত্তাপের আলামত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ‘অশালীন বক্তব্য ও হত্যার হুমকি’ ইস্যু হলেও আওয়ামী লীগের রাজপথে নামা সাময়িক নয়। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তা একই গতিতে চলবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দল ইতিবাচক রাজনীতি করে। জনকল্যাণের রাজনীতি করে। এ কারণে সরকারে আসার পর একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ দল। কিন্তু একটা অশুভ শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা যেমন পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পথ খুঁজছে, তেমনি রাজপথেও নাশকতা-অরাজকতার চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদ জানাবে। মিছিল-স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করবে।’
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গত ৩১ মে এক যৌথসভায় গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘বিএনপি মনে করেছে ছাত্রদলকে দিয়ে ক্যাম্পাসে অরাজকতা করবে। তারা “পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার” স্লোগান দেবে, নেত্রীকে হত্যার হুমকি দেবে, আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, তারা কি বসে আঙুল চুষব? যারা ছাত্ররাজনীতি করে তারা কি চুপ করে বসে থাকবে? এই কথা বললে তরুণদের মাথা ঠিক থাকে?’
সেদিনের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অশালীন বক্তব্য ও হত্যার হুমকি’র প্রতিবাদে ১০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। একই স্থানে মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
যৌথসভায় সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার দুই মেয়রও উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ জুন সকাল-বিকাল স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং কৃষক লীগের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। ৮ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং ১০ জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। সূত্রমতে, ৩১ মের যৌথসভায় সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দলের উপদেষ্টাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেখানে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা ও দল গোছানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি এ মাসে আওয়ামী লীগের তিনটি দিবসভিত্তিক কর্মসূচি আছে। একটি ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ১১ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস এবং ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ ছাড়া ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। ওইদিন সেতু উদ্বোধন শেষে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িয়ায় জনসভা হবে। এ কর্মসূচিতে ১০ লাখ লোকের সমাগম আশা করছে দলটি।
এদিকে আগামী ডিসেম্বরেই দলটির সম্মেলন হবে বলে এর সভাপতি গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জানিয়েছেন। সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন চলছে। আর সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরেই সারা দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে।
জেলা পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করে কেন্দ্রের সম্মেলন করবে দলটি। তবে তার আগে শোকের মাস আগস্টে বরাবর পুরোটা সময় দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে থাকে। শোক ও শ্রদ্ধায় জাতির জনককে স্মরণ করে। সেপ্টেম্বরে মহিলা ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হবে।
এরপর প্রস্তুতি শুরু হবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের, যা চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। বস্তুত এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি ‘রাজপথ দখলে’ নেয়ার যে মিশন শুরু করেছে, পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক, দিবসভিত্তিক এবং নির্বাচনি প্রস্তুতির কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তা চলবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অতীত ঐতিহ্য প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। আমরা এখন সরকারে আছি, রাষ্ট্রের এবং জনগণের উন্নয়নে মনোযোগী। কিন্তু এই সুযোগে রাজপথ কেউ দখল করবে, সেটা হবে না। সরকারের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠেও আমরা সক্রিয় থাকব। কেননা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নাশকতা, অরাজকতা, সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র নানা কিছু করার অপচেষ্টা করা হবে।’