রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ফুল আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করলেন তাদের স্বজনরা। ওই এলাকার রাসায়নিকের গুদাম সরানোর দাবি তুলেছেন তারা।
২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর নবাব কাটারার ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাসায়নিকের গুদামে আগুন কেড়ে নেয় ১২৪ জনের প্রাণ। পাঁচতলা সেই ভবনটি এখন ছয়তলা করা হয়েছে, থাকছেন লোকজন। ভবনটির এক কোনায় নিহতদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার দিনে প্রতি বছরের মতো এবারও শুক্রবার সকাল থেকে ভবনটির সামনে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে মৃতদের স্মরণ করেন স্বজনহারা অনেক মানুষ। তাদের প্রতি জানানো হয় শ্রদ্ধা।
ওই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল সাত বছরের শিশু স্বাধীনের। ঘটনাস্থলে তার বাবা মো. মামুন বিষণ্ন মুখে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে যদি আমার ছেলে বেঁচে থাকত প্রায় ২০ বছর বয়স হতো। জুয়ান হইত। খারাপ লাগে, এক যুগ চলে গেল কিন্তু আমরা বিচারটা এখনও পাইলাম না।
‘১২ বছরেও জানতে পারলাম না ওই কেমিক্যাল গোডাউনের মালিক কে ছিল। আমরা যদি জানতে পারতাম উনি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াইছে, তাহলে মনে শান্তি পাইতাম।
ছেলের স্মরণে দুর্ঘটনার শিকার সেই ভবনের সামনে এসেছেন স্বাধীনের বাবা। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে সব হয়। প্রধানমন্ত্রী চাইলে যেকোনো সময় বের করে ফেলতে পারেন ওই কেমিক্যাল গোডাউনের মালিক কে ছিল। দেখেন এই বাড়ি আগে ছিল পাঁচতলা। এখন আবার নতুন করে একতলা বানাইছে। কিন্তু আমার ছেলে মরার বিচার পাইলাম না।’
আগুনে মো. রিপনের পরিবারের ছয়জন পুড়ে মারা যান। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের ছয়জন মারা যায় ওই আগুনে। তখন আমি রমনা ভবনে চাকরি করি। সন্ধ্যার সময় আমি বাসায় আম নিয়ে আসি। আম খাওয়াইয়া আমি আবার চলে গেছিলাম। তাই আমি বেঁচে গেছি।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রিপন বলেন, ‘দুপুর থেকে ঘটনাস্থলে রান্নাবান্না চলছিল। ভেতরে ছিল জেনারেটর। ওইটা থেকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। বাইরে ছিল মোটরসাইকেল। পাশে বিস্কুটের কারখানা, ববাকরখানির দোকান ছিল। সব মিলিয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে। আটটা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখনও আশপাশে কেমিক্যালের গোডাউন আছে। কিন্তু কেন এগুলো এখনও থাকে? এখনও এই এলাকায় প্লাস্টিক, পলিথিনের কারখানা আছে।’
স্থানীয় মো. আরমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মামলা কী অবস্থায় আছে, আসামি গ্রেপ্তার হইছে কি না- আজও আমরা কিছু জানতে পারিনি। এলাবাসী সবারই এই একই প্রশ্ন। অনেকগুলো রহস্যের মধ্যে এটাও একটা রহস্য থেকে গেছে।’