বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে কূটনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ব্লক ও জোটভিত্তিক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছে চীন।
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে গঠিত কোয়াড ব্লকে (জোট) ঢাকাকে যোগ না দেয়ার জন্য প্রকাশ্যে বলার এক বছর পর বেইজিং ফের একই আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামানকে এ তথ্য জানান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক লিউ জিনসং।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে এটি প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
লিউ জিনসং বলেন, ‘চীন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলো তাদের নিজের দেশ ও আঞ্চলিক মৌলিক স্বার্থ ও স্বাধীন কূটনীতির চর্চা সমুন্নত রাখবে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার মানসিকতা এবং ব্লক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করবে।’
বেইজিংয়ে ২০১৯ সালের ৫ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
‘এই অঞ্চলের দেশগুলোর উচিত হবে সত্যিকার অর্থে বহু দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের নীতি বজায় রাখা এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য কঠোরভাবে পরিবেশ রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে সফল হওয়া,’ যোগ করেন তিনি।
গত বছরের মে মাসে, ঢাকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে কোয়াড জোটে যোগ না দিতে বলে বিতর্কের মুখে পড়েন।
‘অবশ্যই, বাংলাদেশের জন্য চার দেশের এই ছোট ক্লাবে (কোয়াড) যোগ দেয়া ভালো হবে না। কারণ এটি চীন-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে যথেষ্ট ক্ষতি করবে,’ ঢাকায় বলেন লি।
সেই সময় লি’র এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘আক্রমণাত্মক’।’’
মোমেন আরও বলেন, ‘আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চীনের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করিনি।’
এদিকে কোয়াড জোটকে ‘এশিয়ান ন্যাটো’ হিসেবে উল্লেখ করে চীনা কূটনীতিক বলেন, ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেইজিংকে দাবিয়ে রাখতে ও এর উত্থানরোধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট কোয়াডের বিরোধিতা শুরু থেকে করে আসছে চীন।’
বাংলাদেশি কূটনীতিক জামানের সঙ্গে তার বৈঠকে লিউ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাম্প্রতিক বক্তৃতারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘চীনই একমাত্র দেশ যার উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা পুনর্নির্মাণ এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করা।’
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বাইডেন প্রশাসনের চীন-নীতি প্রকাশের অনুষ্ঠানে চীনকে বিশ্ব ব্যবস্থায় শান্তি রক্ষায় সবচেয়ে গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি হুমকি বলেন ব্লিঙ্কেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ, জোট, কৌশলগত প্রতিযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানালেও কমিউনিস্ট দেশের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সংঘাত এড়িয়ে চলারও আহ্বান জানান চীনের এই কূটনীতিক।