বাংলাদেশ থেকে ৮জন যাত্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি গেল ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। যাত্রীদের বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। নতুন এই ট্রেন সার্ভিসে যাত্রা করতে পেরে যাত্রীরাও বেশ উচ্ছ্বসিত। দু’দেশের মধ্যে তৃতীয় এই ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে বুধবার।
বুধবার ভারতে উদ্বোধনের পর রাতে বাংলাদেশে এসে পৌঁছে ট্রেনটি। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার লিটন দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৮ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গেছে মিতালী এক্সপ্রেস। তাদের মধ্যে ৩জন বাংলাদেশি এবং ৫ জন ভারতীয় নাগরিক।
ট্রেনটির পরিচালক শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিতালী এক্সপ্রেসে মোট আসন ৪০৮টি। তবে বৃহস্পতিবার ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে গেছে ৮জন যাত্রী নিয়ে। ট্রেনটির নিরাপত্তায় দুই দেশের পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন।’
ভারতের নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার আগে ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে মিতালী এক্সপ্রেসে উঠছেন যাত্রীরা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটির দুই যাত্রী এনামুল হক ও তার স্ত্রী আনজুমান আরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূলত ঘোরার উদ্দেশ্যই ভারতে যাচ্ছি। এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
মিতালী এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করার জন্যই ভারতে যাচ্ছেন নরসিংদীর বাসিন্দা ইমরান হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমি চাকরি করি। নতুন এই ট্রেনে যাত্রা করার অনুভূতি অন্যরকম লাগছে।’
ঢাকা থেকে এই ট্রেনে দেশে ফিরছেন আসামের নাগরিক জিতেন চন্দ্র বর্মণ ও তার স্ত্রী। তারা এক মাস আগে নরসিংদীর পৈতৃক ভিটায় ঘুরতে এসেছিলেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি আসামের গুয়াহাটিতে। পৈতৃক ভিটা দেখতে নরসিংদী এসেছিলাম। বাংলাদেশ ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে। আর মিতালী এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
ভারতের নাগরিক অন্য দুই যাত্রী হলেন মুম্বাইয়ের আবু তালিব ও শিলিগুড়ির অধিবাসী বুলু সরকার। মিতালী এক্সপ্রেসের ঐতিহাসিক যাত্রার সাক্ষী হতে পেরে তারাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
বুধবার সকালে ভার্চুয়াল ফ্ল্যাগ-অফের মাধ্যমে ভারত থেকে ট্রেনটির যাত্রা উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও ভারতের রেলমন্ত্রী আশ্বিনি বৈষ্ণব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় নয়াদিল্লিতে। বুধবার রাতে ট্রেনটি ঢাকায় এসে পৌঁছে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মধ্যে চলাচল করবে। ট্রেনটি সপ্তাহে চার দিন চলাচল করবে। ভারত থেকে রোববার ও বুধবার, বাংলাদেশ থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার। ট্রেনের ভাড়া এসি বার্থে ৫২৫৫ টাকা, এসি সিট ৩৪২০ ও এসি চেয়ার ২৭৮০ টাকা।
ট্রেনটি হলদিবাড়ী (ভারত)-চিলাহাটি (বাংলাদেশ) রুট দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেনের পরিচালন সময় ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে ভারতীয় সময় বেলা ১১টায় আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছবে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। অনুরূপভাবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ছাড়বে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আর নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছবে ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে।
এই ভাড়ার মধ্যেই যোগ হবে ভ্রমণ কর, যে কারণে যাত্রীদের নতুন করে খরচ দিতে হবে না। অন্যদিকে পাঁচ বছরের কম বয়সী যাত্রীদের ভাড়া হবে অর্ধেক। নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি ওজনের মালামাল বিনা মাসুলে নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, ট্রেনটি ভারতের দিকের শেষ স্টেশন হলদিবাড়িতে ১০ মিনিট থামবে। আর বাংলাদেশের দিকে প্রথম স্টেশন চিলাহাটিতে চালক পরিবর্তনের জন্য আধ ঘণ্টার জন্য থামবে। এছাড়া এটির আর কোনো বিরতি নেই। ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি ছাড়ার পর ভারতের হলদিবাড়ী স্টেশনে ভারতীয় সময় ১২টা ৫৫ মিনিটে পৌঁছাবে এরপর ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ১টা ০৫ মিনিটে ফের ছাড়বে।
বাংলাদেশ সময় ১টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি চিলাহাটি পৌঁছাবে আর ছাড়বে ২টা ২৫ মিনিটে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ার পর চিলাহাটি পৌঁছাবে বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে আর ছাড়বে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। এরপর ট্রেনটি ভারতীয় সময় ৬টায় হলদিবাড়ী (ভারত) পৌঁছাবে এবং হলদিবাড়ী থেকে ৬টা ৫ মিনিটে ছাড়বে এবং ভারতীয় সময় ৭টা ১৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে।
এক সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের আটটি রেল সংযোগ ছিল। পাকিস্তান আমলে এসব লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বন্ধ থাকা লাইনগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের সরকার।