নির্বাচনী সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত শেষে ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কমিশন সভায় সার্বিক বিষয়ে আলোচনার পর ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মো. আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল করেছে কমিশন।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রচারে বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর স্থানীয় সরকার (পৌরসভা নির্বাচন) আচরণ বিধিমালার ৩২ ধারা অনুযায়ী কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ১৮ মে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ূম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, বুধবার সন্ধ্যায় শহরের ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় কাইয়ূমের নির্বাচনী প্রচারে হামলা করে নৌকার প্রার্থী খালেকের সমর্থকরা। এর আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাখা চাওয়ার পর তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারপরও তার সমর্থকরা হামলা চালায়। এ কারণে খালেকের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে ইসির। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা আইনেও বিধানটি রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন আইন নেই।
প্রার্থিতা বাতিলের বিধানটি যুক্ত হওয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন প্রথমবারের মতো তা প্রয়োগ করল পৌরসভা ভোটে।
বিধিমালার ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে মেয়র বা কাউন্সিলর নির্বাচন করার অযোগ্য হতে পারেন এমন যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত রিপোর্ট কমিশনের কাছে এলে তা তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে ইসি। তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে কমিশন সন্তুষ্ট হলে ইসি তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
ইসির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জেলা আওয়ামী লীগ
এদিকে নৌকার প্রার্থী আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হুসাইন বলেন, ‘আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন থেকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশনেও আপিল করব এবং আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অশোক ধর বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেক এমন কোনো কাজ করেননি যে তার প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। আর ঝিনাইদহ শহরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যার জন্য নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে আব্দুল খালেক বলেন, ‘এসব ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো দলীয় সমর্থক বা কর্মী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি আইনের আশ্রয় নেব।’
ঝিনাইদহ পৌরসভায় ভোট হবে আগামী ১৫ জুন। নৌকার প্রার্থী না থাকায় এখন মেয়র পদ পেতে লড়বেন নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল, মোবাইল ফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মাসুম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের সিরাজুল ইসলাম।
এদের মধ্যে কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল ও মিজানুর রহমান মাসুম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।