রাজশাহীর অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে মাঠে নেমেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। বন্ধ করা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানও। এর পরও নির্দেশ অমান্য করে কিছু প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিভিল সার্জন অফিসের পাঠানো তথ্যে বলা হয়, চার দিন অভিযান চালিয়ে নগরী ও উপজেলা পর্যায়ে ৪১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শহরের ক্লিনিক রয়েছে দুটি।
এদিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্ধ করা অনেক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও কাজ চলছে। তবে জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো কেউ নিজেরাই খুললে আবারও অভিযান চালানো হবে।
বন্ধ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাঘা উপজেলায় ১১টি, বাগমারা উপজেলায় ৮টি, গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩টি, চারঘাট উপজেলায় ৩টি, দুর্গাপুর উপজেলায় ২টি, মোহনপুর উপজেলায় ৩টি, তানোর উপজেলায় ৩টি, পবা উপজেলায় ৬টি ও নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকায় ২টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্ধ করা অনেক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বৃহস্পতিবারও খোলা ছিল। বাগমারা উপজেলার ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকগুলো ব্যবসা করছে আগের মতোই। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মাইকে চিকিৎসক বসার সময় ঘোষণা করতে দেখা গেছে।
বাগমারা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা তো ম্যাজিস্ট্রেসি যে পাওয়ার, সেটি অ্যাপ্লাই করিনি। আমরা জানি সেগুলো বন্ধ আছে। আমরা বলে দিয়েছি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান খোলা পাই, তবে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ ও জরিমানা করব।’
এখনও সেগুলো খোলা আছে কীভাবে- জানতে চাইলে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমি বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের খোলার পাওয়ার আছে, খুলতে পারে। এখন কেউ যদি ওপেন করে এর দায়দায়িত্ব তার ওপর বর্তাবে। পরবর্তী সময়ে আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা বা অন্য কিছু করব।
‘আমরা স্টেপ বাই স্টেপ করছি। আপনি খোলা পেয়েছেন, জানালেন। আমি যেকোনো মুহূর্তেই আবার অ্যাকশনে চলে যাব।’
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাঘা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শরিফুল ইসলামকে ফোন করে রোগী নিয়ে আসা যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা আছে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশনার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কীভাবে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো নোটিশ নেই। আমার কাছেও এমন কোনো তথ্য নেই। আমাদের ১৮-১৯ লাইসেন্স করা আছে। এরপর আর নেই। আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে বলা আছে। এটি কীভাবে বন্ধ করল, সেটি জানা নেই।
‘আমি স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দেখি, কী হয়েছে। তবে আমার প্রতিষ্ঠান এখনও সচল আছে।’
বুধবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর এলাকার নিউরো কেয়ার ও মেডিক্যাল কলেজ গেট এলাকার শাহ মখদুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বুধবার রাতে গিয়ে দেখা গেছে, বাইরে থেকে গেট লাগানো কিন্তু ভেতরে লোকজন কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহ মখদুম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে একজন চিকিৎসকের খোঁজ নেন এই প্রতিবেদক। ওই সময় পাশের একজনকে বলেন, ‘পেসেন্ট পার্টি ফোন করেছে।’ পরে অন্য একজন ফোন ধরে জানান, এই চিকিৎসক এখানে বসেন না।
কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক পরিচয়ে সেখানে ফোন দিলে জানানো হয়, তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কোনো পরীক্ষা করাতে হলে শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘যেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো বন্ধ কার্যকর হয়েছে।’
বেশ কিছু ক্লিনিক খোলা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর নিউরো কেয়ার তাদের কিছু কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেনি। তাই সেগুলো ঠিক করাতে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে খুলেছিল। তবে এখন বন্ধ আছে। এগুলো তারা কোনোভাবেই খুলতে পারবে না।
‘খুললেই জেল-জরিমানা হয়ে যাবে। অপনি যেহেতু বললেন তাই আবারও আমরা এগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি কেউ খুলে থাকে তবে তার জেল-জরিমানা হবে।’