নওগাঁর ধামইরহাটে শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রকে মূত্রপান করানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন হাতে পেয়ে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জেলা শিক্ষা অফিস।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বুধ এবং বৃহস্পতিবার তদন্ত করেছি। দুপুরে জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এতে চকচান্দিরা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহানা বেগমের বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে তার প্রস্রাব খেতে বাধ্য করার প্রমাণ মিলেছে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত শেষে আমাকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরপর ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন তার নামে বিভাগীয় মামলা হবে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বরখাস্ত আদেশ বহাল থাকবে। এ সময়ে তিনি বেতন-ভাতা তুলতে পারবেন না।’
যা হয়েছিল
ধামইরহাট উপজেলার ইসুবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চকচান্দিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলে শিক্ষক শাহানা বেগমের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রকে প্রস্রাব খাওয়ানোর অভিযোগ ওঠে।
পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। স্কুলে প্রায় ৩ ঘণ্টা শিক্ষক শাহানাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল আলম লাকী, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসতিয়াক আহমেদ ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু ইউসুফ বদিউজ্জামান। সেদিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষক মূত্রপান করানোর বিষয়টি স্বীকার করেন বলে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহমেদ জানান। পরে ঘটনা তদন্তে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
ওই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরের দিকে প্রস্রাবখানায় লম্বা লাইন পড়ে। তখন সে স্কুলের ছাদে প্রস্রাব করে। এ কারণে ম্যাডাম আমাকে অনেক মারধর করেন। আমার হাতে একটা প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ম্যাডাম বলেন, ‘এখানে প্রস্রাব কর।’ আমি ভয়ে প্রস্রাব করি। তারপর ম্যাডাম বলেন, ‘এখন তুই এই প্রস্রাব খা। না খেলে আরও মারব।’ আমি ভয়ে প্রস্রাব খেয়ে বাসায় গিয়ে বাবা-মাকে বলে দিই।”
এ বিষয়ে শিক্ষক শাহানা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাব্বির ছাদে প্রস্রাব করছিল। তখন জানতে পেরে তাকে একটু শাসন করেছি। আর বোতলে প্রস্রাব ভরিয়ে বলেছি, ছাদে কেন প্রস্রাব করলে। এখন তুমি নিজের প্রস্রাব নিজেই খাও। কথাগুলো একটু রাগ করে বলেছিলাম। তবে আমি নিজ হাতে তাকে প্রস্রাব খাওয়াইনি।
‘সে নিজেই ভয়ে একটু প্রস্রাব খেয়েছে। আর যাতে কখনো স্কুলের ছাদে প্রস্রাব না করে, সে জন্য একটু ভয় ও শাসন করার জন্যই এমনটা করেছিলাম। সাব্বির যে প্রস্রাব খেয়ে ফেলবে তা বুঝতে পারিনি। যখন বোতল থেকে প্রস্রাব খাচ্ছিল তখন আমি বলেছি যাও আর প্রস্রাব খেতে হবে না, ক্লাসে যাও।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। এমনটা করা আমার উচিত হয়নি। আমি খুবই দুঃখিত।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক এরশাদ আলী বলেন, ‘যখন ঘটনাটি ঘটে তখন আমি অফিস কক্ষে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। পরে ঘটনাটি জানতে পারি। বুধ এবং বৃহস্পতিবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় তদন্ত করেছেন। ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে। এমন ঘটনা কখনো আশা করা যায় না। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে, এখন জেলা শিক্ষা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’