বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম জনগণের বোঝা হবে না: প্রতিমন্ত্রী

  •    
  • ২ জুন, ২০২২ ১৬:১৯

`বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামের বিষয়টি এখন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে। আমি এতটুকু বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো কিছু করবেন না যাতে বার্ডেন (বোঝা) হয়ে দাঁড়ায়।‘

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম জনগণের বোঝা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামের বিষয়টি এখন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে। আমি এতটুকু বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো কিছু করবেন না যাতে বার্ডেন (বোঝা) হয়ে দাঁড়ায়।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত নাগরিক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সভায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করে আর্থিক ঘাটতি মোকাবিলায় বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেন ক্যাবের সহসভাপতি ড. শামসুল আলম।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য নির্ধারিত, কাদের জন্য ভর্তুকি দিতে চাই, কত দর রাখতে চাই। আমাদের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিদ্যুতের মূল্য দেয়ার সক্ষমতা নেই। তাই ভর্তুকি দেয়া হয়। তবে আমি ভর্তুকি বলি না, বলি বিনিয়োগ। কারণ তারা এই টাকা যাতে নিজের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কাজে খরচ করতে পারে। সারে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে বলে কোভিড কালেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা।’

অনেকে কর তুলে নেয়ার কথা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এলএনজিতে ৩০ হাজার কোটি টাকা কর দিচ্ছি। এ কর না দিলেই তো হয়ে যায়। বিদ্যুতেও ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার মতো হবে। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।’

অনেকে সাগরসহ স্থলেও গ্যাস অনুসন্ধানের কথা বলছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সার্ভে করার পরও ড্রিল করে অনেক সময় গ্যাস পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন সমুদ্রে গেলেই কালকে গ্যাস পাওয়া যাবে। এমন ধারণা ঠিক নয়, গ্যাস পেলেও আনতে ১০ বছর সময় লাগবে।

আমরা গ্যাস দিচ্ছি, চাহিদা আরও বেড়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা হচ্ছে। এখনও ৫৫০ থেকে ৬০০ শিল্প সংযোগের আবেদন পড়ে রয়েছে। আমরা চাই শিল্প হোক, কর্মসংস্থান বাড়ুক। গ্যাস আমদানি করতে খরচ পড়ছে ৫৯ টাকা। গ্যাস বিক্রি করছি ৭ টাকায়। সংকটের কারণে ইতালি এসি বন্ধ রেখেছে, এমন হতে পারে আমরা টাকা দিলেও গ্যাস মিলছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। প্রথম পরিকল্পনা ছিল দ্রুত বিদ্যুৎ দেব, তেল দিয়ে উৎপাদনে গেছি। সেখানে সফল হয়েছি, শিল্পের উৎপাদন বেড়েছে, মানুষের জীবনমান বেড়েছে। শিল্পমালিকরা গ্রামে যেখানে কম দামে জমি পেয়েছেন, সেখানে কারখানা করেছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাবের উদ্যোগটা ভালো, আমি কিছু অংশ দেখেছি। তবে আরও গঠনমূলক পরামর্শ দিতে পারেন যাতে কাজে আসে। আরও একটু আধুনিক করা যায় কি না ভেবে দেখা দরকার। কালকে যদি ৮০০ মিলিয়ন গ্যাস আমদানি বন্ধ করি, তাহলে সব শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কি শিল্প বন্ধ করে দেব।’

কয়লা উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জমি নিয়ে যদি কয়লা উৎপাদন করি তাহলে কী হবে। ফসল উৎপাদন কমে যাবে। যে কারণে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। সামান্য পরিমাণে উত্তোলন করা হচ্ছে।’

ক্যাবের বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, বিতরণ ও সঞ্চালন লাইসেন্সির পুঞ্জিভূত নিট মুনাফার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এমন মুনাফা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এবং লুণ্ঠনমূলক। গ্যাসের চুরি কমানো গেলে দৈনিক ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি কম করলেও চলে। চুরি কমানো, উৎস ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। জ্বালানি খাতে সব ক্ষেত্রে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় এবং অবচয় ব্যয় সমন্বয় হলে ভর্তুকি কিংবা মূল্যবৃদ্ধি কোনোটারই প্রয়োজন পড়ে না। বরং ইউনিটপ্রতি ১৬ পয়সা কমানোর সুযোগ রয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতের বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৭০ শতাংশ হারে চালানো গেলে নিট উৎপাদন বাড়ে ৪১২ কোটি ইউনিট। হ্রাসকৃত গ্যাস সমন্বয়ের পর নিট খরচ বাড়ে ২ হাজার ৩০৮ কোটি ঘনফুট। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল প্ল্যান্টে দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হলে ৫ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা কমানো যায়। পাইকারি বিদ্যুতে নতুন করে করারোপ না করলে ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। আমদানি পর্যায়ে ফার্নেস অয়েলের ওপর শুল্ককর অব্যাহতি প্রত্যাহার করায় ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। পাইকারি মূল্যহারের সমন্বয়হীনতা দূর করা গেলে ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা ঘাটতি কমানো যায়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইকুইটির ওপর পিডিবি ৩ শতাংশ, পাবলিক কোম্পানি ১২ শতাংশ, যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি ১৬ শতাংশ মুনাফা পাচ্ছে। কুইক রেন্টালের তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় ১৮ শতাংশের কম না। বিইআরসির মানদণ্ডে এই মুনাফা ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা না। এখানে মুনাফা কমানো গেলে খরচ সাশ্রয় হয়।’

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করতে কার্পণ্য করবে না। আমরা যেটুকু দেখি তাতে মনে হয় মিতব্যয়িতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা গেলে অনেক সাশ্রয় হতো। জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। এখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সংকট থেকেই যাবে। দেশের কয়লাক্ষেত্রগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।

‘সব জিনিসের দাম বাড়ছে, মানুষের অবস্থা খারাপ। সরকার বলছে, বিশ্বব্যাংক বলছে মানুষের আয় বেড়েছে। হয়তো বেড়েছে, কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ জনগণ কিন্তু অনেক সংকটে রয়েছে।’

ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো মূল্যস্ফীতি আমাদের দেশে হয়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎ জ্বালানির মতো পণ্যের প্রশাসনিক প্রাইস। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে মানুষের মনের আগুন দাবানলে রূপ নিতে পারে।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘আজকের এই সংকটের মূলে চড়া এলএনজি আমদানি। আমরা যদি যথাযথভাবে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান করতে পারতাম, তাহলে আজ এলএনজি আমদানি করতে হতো না। বঙ্গবন্ধু সরকার ছাড়া আর কোনো সরকার গ্যাস অনুসন্ধানে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেনি। এখানে মনোযোগ দেয়া জরুরি না হলে সংকট থেকেই যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর