দেশে খাদ্যের ঘাটতি নেই বলে আশ্বস্ত করে মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করার কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বৃহস্পতিবার বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিংসংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি মহল খাদ্য ঘাটতির বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই। মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ অভিযান আরও জোরালো হবে।
‘বড় বড় করপোরেট হাউস ধান-চাল সংগ্রহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিল না থাকলে তারা যেন এ ব্যবসায় যুক্ত না হতে পারে সেটা নিশ্চিতে ধান-চালের বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে।’
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নে জোর দিতে হবে। কেউ যেন লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা না করতে পারে, অবৈধ মজুত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চালের দাম ও গমের দাম কমতে শুরু করেছে। সে দেশগুলো চাল ও গম রপ্তানি করবে মর্মে পত্রও দিচ্ছে। বাজার অস্থির করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ট্যাক্স কমিয়ে চাল আমদানি করা হবে।’
সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুই কারণে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে। প্রথমত সরকার ধান কিনলে কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়। দ্বিতীয়ত জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’
‘বোরো সংগ্রহ সফল করতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না। ধান চাল সংগ্রহকালে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। তবে চালের কোয়ালিটির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।’
দেশের বাজারে কয়েক দিন ধরেই চালের দাম চড়া। কেজিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। অভিযোগ আছে, মিলাররা ধান-চাল মজুত করে রাখছেন। একইভাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশনের নীতি অনুমোদনের বাইরে গিয়ে ধান-চালের ব্যবসায় নেমেছে। তারা প্যাকেটজাত আকারে সেগুলো বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বাড়তি দামে বিক্রি করছে। এতে চালের ক্রয়ক্ষমতা ভোক্তার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে চালের বাজারে অভিযান শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। গত মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা মার্কেটে অভিযান চালিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব অভিযানে চাল ব্যবসার লাইসেন্স আছে কি না এবং অনুমোদনের বেশি মজুত করা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফুড গ্রেইন লাইসেন্স যাচাইয়ের পাশাপাশি খাদ্যশস্যের ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদও যাচাই করে দেখছেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। একই সঙ্গে মিলগেটে কী মূল্যে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা দেখা হচ্ছে।
রাজধানীতে গত দুই দিনের অভিযানে দেখা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযান শুরুর পরই দোকান বন্ধ করে বা ফাঁকা রেখে সরে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদেরও অনেকে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে ব্যবসা করছেন।
খুচরা বা পাইকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ মজুত রাখতে পারবেন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই ব্যবসায়ীদের। আবার ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে দোকানে কী পরিমাণ মজুত আছে তার কোনো সঠিক হিসাব পাননি অভিযানে নামা কর্মকর্তারা।
এর মধ্যেই গত বুধবার সাংবাদিকদের খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খোলা বাজার থেকে চাল কিনে তা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা যাবে না।
ওই সময় দেশের বাজারে চালের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য ছয়টি শিল্পগ্রুপ স্কয়ার, প্রাণ, সিটি, আকিজ, বসুন্ধরা ও এসিআইকে দায়ী করেন মন্ত্রী।
এই ছয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সাধন চন্দ্র বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি যে এই সার্কুলার জারি করা যায় কি না, যারা প্যাকেট করে চাল বিক্রি করবেন তারা দেশের বাজার থেকে কিনতে পারবেন না। তারা ৬৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করে প্যাকেট করবেন। এটা আলোচনা চলছে।’
চালের অবৈধ মজুতের তথ্য জানতে এরই মধ্যে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তিনটি ফোন নম্বরের মাধ্যমে যে কেউ চালের অবাধ মজুত সম্পর্কে জানাতে পারবেন। তথ্য জানাতে +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩০০৩৫০৬ নম্বরে ফোন করে তথ্য দিতে অনুরোধ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।