বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেলস্টেশনে তরুণী হেনস্তা: গ্রেপ্তার মার্জিয়ার বিচার চেয়ে মানববন্ধন

  •    
  • ২ জুন, ২০২২ ১৫:০৩

আমরাই পারির প্রধান নির্বাহী জিন্নাত আরা হক বলেন, ‘স্টেশনে তরুণীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। আজ নরসিংদীতে স্থানীয় জনগণ নিয়ে এই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। হেনস্তাকারী প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার মামলায় গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তারের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।

স্থানীয় নারী কল্যাণ সংস্থা মাদারস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার সকালে নরসিংদী রেলস্টেশনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, আমরাই পারি, জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম, নারী নিরাপত্তা জোট, উইক্যান ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কিছু নারী সংগঠনের নেতারা যোগ দেন। তারা তরুণী হেনস্তার নিন্দা জানিয়ে নারীদের নিরাপত্তার দাবি জানান।

ফেসবুকে তরুণীকে হেনস্তার ভিডিওটি গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার ছড়িয়ে পড়ে। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তার আগের দিন ভোরে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তারকে রোববার রাতে এক আত্মীয়র বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

এর আগে তরুণীকে হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের পছন্দের পোশাক পরে নরসিংদী রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়িয়েছেন একদল তরুণী। তাদের কারও পরনে ছিল জিন্স-টিশার্ট, আবার কেউ পরেছেন ট্রাউজার-টপস।

বৃহস্পতিবার মানববন্ধনে আমরাই পারির প্রধান নির্বাহী জিন্নাত আরা হক বলেন, ‘নরসিংদী রেলস্টেশনে প্রায় ৫০টি সংগঠন তরুণী হেনস্তাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে প্রতিটা নির্যাতিত নারীর পাশে আমরা দাঁড়াতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্টেশনে তরুণীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। আজ নরসিংদীর মানুষ নিয়ে এই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। হেনস্তাকারী প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

মানববন্ধনে অংশ নেয়া মমতা আরা বেগম বলেন, ‘নরসিংদীর স্টেশনে যে নারী হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তিনি একজন মানুষ। একজন মানুষ আরেকজনকে বুঝিয়ে কথা বলতে পারে। কিন্তু শ্লীলতাহানি করতে পারে না। আমরা ভিডিওতে দেখেছি, যেভাবে ওই তরুণীকে টানা-হেঁচড়া করেছে, এটা কোনো বিবেকবান মানুষ বরদাস্ত করবে না। আমারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

বক্তব্যে জামিলা সুলতানা বলেন, ‘স্টেশনে তরুণী হেনস্তার ঘটনা নারীসমাজের সবাইকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছি না। এই হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্য গড়ে তুলতেই আজ নরসিংদী স্টেশনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করছি। অপরাধী যেই হোক, প্রশাসন দ্রুত সবাইকে বিচারের আওতায় আনবে বলে আশা করি।’

যা ঘটেছিল সেদিন

স্টেশন ঘুরে ১৯ ও ২০ মে দুই দোকানদার মো. আমিনুল ও ইখলাস উদ্দিন এবং ভাসমান পণ্য বিক্রেতা মো. মেহেদীর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। পুরো ঘটনা তারা দেখেছেন।

তারা জানান, ভোরে ঢাকামুখী ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই দুই যুবক ও তরুণী। হঠাৎ পাশ দিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ তরুণীকে দেখে বলে ওঠেন, ‘আপনার বাড়ি কই? কাল রাতেও এখানে এসেছেন। আজকেও আসছেন। এসব পোশাক পরে কেউ স্টেশনে আসে নাকি?’

মেয়েটির সঙ্গে থাকা হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা তরুণ ওই বৃদ্ধকে তখন বলেন, ‘আপনি এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন? আপনি এভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না।’

এ নিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে ওই যুবকের বাগবিতণ্ডার মধ্যে আরেক নারী এসে মেয়েটির পোশাক নিয়ে কটাক্ষ ও গালমন্দ করতে থাকেন। ততক্ষণে চারপাশে কিছু লোক জড়ো হয়।

ওই বৃদ্ধ ও নারীর সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দিয়ে তরুণী ও যুবককে গালমন্দ করতে থাকেন। ওই যুবকও তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। একপর্যায়ে আরেক ব্যক্তি যুবককে ধাক্কা দেন। মেয়েটি তখন যুবককে নিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করলে ওই নারী মেয়েটিকে টানা-হেঁচড়া করতে থাকেন।

তরুণী ও সঙ্গে থাকা দুই যুবক সরে গিয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী দুই দোকানদার আরও জানান, তখনই ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন চলে আসায় ওই তরুণী ও সঙ্গে থাকা প্রতিবাদকারী যুবক তাতে উঠে চলে যান। সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাটি মিনিট দশেকের।

ভাসমান দোকানদার মেহেদী নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার সূত্রপাত এক নারীর কটাক্ষের জেরে।

তিনি জানান, ওই যুবক ও তরুণীকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ট্রেনে করে নরসিংদী নামতে দেখেছেন। বুধবার ভোরে তারা আবার ঢাকা যাওয়ার ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। সে সময় এক নারী মেয়েটির পোশাক নিয়ে প্রথম মন্তব্য করেন।

মেহেদী বলেন, ‘ওই নারী মেয়েটাকে বলতে থাকে যে, এসব পোশাক পরে কেন ঘোরাঘুরি করছে, তার বাড়ি কই। ওই নারী মেয়েটার ভিডিও করতে নেয়। তখন মেয়েটার সঙ্গে থাকা একটা ছেলে প্রতিবাদ করতে থাকে।

‘সে সময় কালো শার্ট পরা একটা লোক ওই ছেলেকে ধাক্কা দেয়। মেয়েটা তখন মোবাইল বের করে কাউকে কল করতে থাকে। এসবের মধ্যে ওই নারী মেয়েটার দিকে তেড়ে যায়।’

ঘটনার সময় স্টেশন মাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন নাইয়ুম মিয়া।

তিনি বলেন, ‘ভোরে আমি কন্ট্রোল রুমে বসে ছিলাম। সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেসকে সিগন্যাল দিচ্ছিলাম। তখন দেখি বাইরে কিছু লোক জড়ো হয়ে আছে।

‘আমি গেটের সামনে আসতেই বাঁচাও বাঁচাও করে আধুনিক পোশাক পরা এক তরুণী ও আরেক তরুণ আমার কক্ষে আসে। তাদের কাউকে ফোন দিতে দেখলাম। অল্প সময়ের মধ্যে স্টেশন ও থানা পুলিশ এসে হাজির।’

তিনি আরও বলেন, “তখন মেয়েটি বলছিল, ‘আমি এসব পোশাক পরাতে এদের সমস্যা কী? তারা আমাদের হেনস্তা করছে। বাংলাদেশের সবাই শাড়ি পরে বেড়াবে নাকি?” পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলে। আমি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মেইল ট্রেন থামানোর জন্য সিগন্যাল দিতে ব্যস্ত হয়ে যাই।’

প্রশাসনের তৎপরতা

ঘটনা ১৮ তারিখ ভোরে ঘটে, সে সময় মডেল থানা পুলিশের এক এএসআই সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেন। তবে হেনস্তাকারীদের কাউকেই সে সময় আটক করা হয়নি।

এএসআই ইকবাল হোসেন পরে জানান, তিনি কারও নাম-পরিচয়ও নেননি। রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষও সে সময় হেনস্তাকারীদের আটক করেনি, কোনো তথ্যও রাখেনি। যদিও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নিউজবাংলাকে জানান, এএসআইকে তারা হেনস্তার শিকার তরুণী-তরুণ ও হেনস্তাকারীদের নাম-ফোন নম্বর টুকে রাখতে দেখেছেন।

ঘটনার পরদিন হেনস্তার ঘটনার মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হয়। তারও এক দিন পর পুলিশ ও রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেয় ও হেনস্তাকারীদের খুঁজতে তৎপর হয়।

তারা জানায়, ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

পরে ২০ মে রাতে হেনস্তাকারী সন্দেহে একজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস জানান, আটক ব্যক্তির নাম ইসমাইল হোসেন। তার বাড়ি নরসিংদী সদরের নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামাড়া গ্রামে। তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। সেদিনই আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস নিউজবাংলাকে জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২১ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলা করে। তাতে ইসমাইলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর