বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে জমি দখল করে মাছের ঘের করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। মাছ চাষের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের নিচ দিয়ে পাইপ দিয়ে ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করানোর ফলে প্রকৃত জমির মালিকরা ধান চাষ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগের বিষয়টি ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজেই নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, পঞ্চকরণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার ও তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়নের মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার ২০০ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ঘের করছেন তারা।
নিজেদের জমি দখলমুক্ত করা ও অভিযুক্তদের বিচার দাবিতে বুধবার দুপুরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
‘দখল হওয়া জমির’ মালিকদের মধ্যে আব্দুল বারেক হাওলাদার একজন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মিস্ত্রিডাঙ্গা মাঠে আমার সাড়ে ৫ বিঘা জমি রয়েছে। কয়েক বছর ধরে বদিউজ্জামান ও বাহাররা আমারসহ এলাকার অনেকের জমি দখল করে ঘের করে আসছে। তারা হাড়ির টাকা (মৌখিক চুক্তি) দেয় না, আবার লবণাক্ত পানি ঢুকানোর কারণে আমরা ধানও চাষ করতে পারি না। আমরা চাই, যে যার জমিতে ঘের করবে। তারা কেন জোর করে মাছ চাষ করবে।’
ওই ঘেরে নিজের তিন বিঘা জমি আছে- দাবি করে ফনিভূসন হাজরা বলেন, ‘একটা মগের মুল্লুক চলছে। নিজের জমি থাকতে চাল কিনে খাই। তারা যেভাবে লবণ পানি উঠায়, আমরা ধান চাষ করতে পারি না।’
শুধু বারেক হাওলাদার ও ফনিভূসন নয়, তাদের মতো একই দাবি আব্দুল মান্নান আকন, অমল হাওলাদার, জামেনা বেগম, আলীম খানসহ অনেকের।
এ বিষয়ে তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয় কুমার মন্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তেলিগাতী ইউনিয়নের মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দুই শ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের করছেন পার্শ্ববর্তী পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মজুমদারের ভাইয়ের ছেলে বদিউজ্জামান মজুমদার ও বাহার হাওলাদার। এদের সঙ্গে স্থানীয় খলিল হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, বেলায়েত হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুই শ বিঘার জমির মধ্যে এই দখলদারদের কোনও জমি নেই। এর মধ্যে স্থানীয় অর্ধশত মানুষের ৮০ থেকে ১০০ বিঘা এবং অন্য এলাকার কয়েকজনের এক শ বিঘা জমি রয়েছে। বদিউজ্জামান ও বাহাররা ওই জমির মালিকদের হাড়ির টাকাও দেয় না। মৎস্য ঘেরে বাগদা চাষের জন্য বেড়িবাঁধ কেটে লবণ পানি ঢুকিয়ে ধানেরও ক্ষতি করছেন তারা।’
তেলিগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খান জালাল আহমেদ লাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তারা এলাকার নিরীহ মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে কৃষকরা ধানও ফলাতে পারেন না। কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তরে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোনও ফল পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কৃষকদের জমি দখলমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার বলেন, ‘অন্য ইউনিয়ন থেকে এসে গায়ের জোরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার মানুষের জমি দখল করে খাচ্ছে পঞ্চকরন চেয়ারম্যানের ভাইপো। এলাকার মানুষ আমার কাছেও অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। দখলদারদের কারণে স্থানীয়রা বিপদে রয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারেন না এদের। এরা এত বেপরোয়া যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের নিচে পাইপ দিয়ে মাঠে লবণ পানি ঢোকায়। এলাকার মানুষকে বাঁচাতে এখনই এই জমি দখল মুক্ত করা প্রয়োজন।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পঞ্চকরণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কৃষক ও স্থানীয়রা যে অভিযোগ করেছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। ওই ঘেরে আমার বাবা ও চাচাদের ১২ বিঘা জমি রয়েছে। আমরা কারও জমি জোরপূর্বক দখল করিনি। ঘেরে অন্য যাদের জমি রয়েছে, তাদেরকে নিয়মিত হাড়ির টাকা দিয়েই ঘের করা হয়।’
আরেক অভিযুক্ত তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার বলেন, ‘এই ঘেরে প্রায় ৬০ জন লোকের জমি রয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ লোক আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা কারও সঙ্গে জবরদস্তি করিনি। সবাই নিজের ইচ্ছায় আমাদের কাছে জমি লিজ দিয়েছেন।’
বদিউজ্জামানের চাচা পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাজ্জাক মজুমদার বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ওখানে আমাদের নিজেদের জমি রয়েছে। আমার ভাইপো ওই জমি দেখভাল করে। এছাড়া অন্য মালিকদের জমির জন্য হাড়ির টাকা দেয়া হয়।’
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘের পরিদর্শন করে এবং স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’