মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে জটিলতা নিরসনে ঢাকায় এসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানন।
তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বুধবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশের জনশক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের বিরোধ, সরকারের উদাসীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মূল কাজটি ঝুলে আছে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে। অথচ দুই দেশ এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছিল আরও আগেই। সে জট খুলতে ঢাকায় এলেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী।
বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বা সচিব স্বাগত জানাননি মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে। অনেকটা দায়সারা গোছের অভ্যর্থনার কাজ সেরেছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।
এটি বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারই কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে ঢাকা ও কুয়ালালামপুর। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে মালয়েশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন এম সারাভানন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, শ্রমবাজার খোলা নিয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হলেও সিন্ডিকেট বিতর্কের অবসান ঘটাতে রাজনৈতিক পর্যায়েও বৈঠক হবে।
বৈঠকে ঢাকার অংশে নেতৃত্ব দেবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশটিতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে কয়েক দফা মালয়েশিয়া সফর করেন। একই সঙ্গে তিনি জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেন।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে গত বছরের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করে মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি সারাভানন এমওইউতে সই করেন।
এ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মালয়েশিয়া প্রান্তে বাংলাদেশি কর্মীদের সব খরচ বহন করবেন নিয়োগকর্তা।
এ নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন: রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ বহন করবেন। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন।
‘মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিনসংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা/কোম্পানি বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায়, কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।’
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনে আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে উভয় দেশ বিশ্বাস করে।
‘বাংলাদেশের কর্মীরা যেমন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে যাচ্ছে, যা উভয় দেশ স্বীকার করে।’