কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাথুরীয়াপাড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে কড়া নাড়তে দেখা গেছে একদল নারীকে। ভোটারের হাতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি লেখা হ্যান্ডবিল।
ওই নারীদলের একজন শাহিদা আক্তার। জানালেন, বছর পাঁচেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেছেন। তখন থেকে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ওই ওয়ার্ডে একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন। এলাকার কিছু বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন।
নিউজবাংলাকে শাহিদা বলেন, ‘আমি অন্যের বাসায় কাজ করি। সেখানে মাসে যে টাকা পাই তা দিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো রকম খেয়ে-পরে আছি। নির্বাচন আসার পর প্রতিদিন বিকেলে হ্যান্ডবিল বিতরণ করছি।
‘একবেলা ওয়াক (হেঁটে হ্যান্ডবিল বিতরণ) করলে ২০০ টাকা পাই। তা দিয়ে প্রতিদিন কিছু চাল ও তরকারি কিনতে পারি। আমার মতো আরও অনেক নারী আসেন। প্রচার করে তারাও ২০০ টাকা করে পাচ্ছেন।’
সিটি নির্বাচনকে ঘিরে শাহিদার মতো অনেক নারী মৌসুমি উপার্জনের এই কাজ পেয়েছেন। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের হ্যান্ডবিল বিতরণ করতে দেখা যায়। পাথুরীয়াপাড়ায় এমন পাঁচটি দলের দেখা মেলে বুধবার দুপুরে। আলাপ হয় ওই দলের কয়েকজনের সঙ্গে।
তারা জানালেন, বিকেল থেকে রাত অব্দি হ্যান্ডবিল বিতরণের এই কাজে নামেন নারীরা। তাদের কেউ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার, আবার কেউ অন্য এলাকার ভোটার। প্রচার শেষে তাদের হাতে প্রার্থীরা এক এক চক্কর হাঁটার বিনিময়ে ২০০ টাকা দেন। বাড়তি এই উপার্জনে পরিবারের বাড়তি কিছু খরচ চালানো যায় বলে দরিদ্র অনেক নারীই হ্যান্ডবিল বিতরণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ড শুভপুরে গিয়েও দেখা যায় এমন কয়েকটি দলের। সেখানে আলাপ হয় মিলি বেগমের সঙ্গে। তিনি একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সবাইরে ২০০ টাকা কইরা দেই। সবাই ভোটার না। শুধু প্রচারের লাইগ্গা তারারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনি। দুপুরে আইয়ে আর সন্ধ্যায় যাওনের সময় ২০০ কইরা দেই।’
মিলি জানালেন, তিনি নিজেও সিটি করপোরেশনের নয়, দেবীদ্বারের ভোটার।
দলের নেতা হিসেবে আপনি কত টাকা পান? জবাবে মিলি বেগম বলেন, ‘আমি সবাইরে একলগে করি। কোন কোন পাড়া-মহল্লায় যাব, কয়ডা হ্যান্ডবিল বিতরণ করব, কেমনে ভোট চামু তা সব আমার দায়িত্ব। তাই আমি ৫০০ টাকা পাই।’
বাড়তি আয়ের আশায় কুমিল্লা নগরীতে অন্তত ২০০ নারী মৌসুমি এই কাজে যুক্ত হয়েছেন বলে জানালেন মিলি।
তিনি বলেন, ‘১৫ তারিখ ভোট। ১৪ তারিখের পরে কেউ আর জিগাইব (জিজ্ঞেস করবে) না। তাই এহন যেমনে পারি কুদ্দুর (একটু) কাম (কাজ) কইরা কয়ডা টেহা (টাকা) কামাই করি। পোলা-মাইয়া লেহাপড়া করে। এডির (তাদের) লেহাপড়ার খরচ আর সংসারডার খরচ মিলাইয়া কুলাইয়া উঠতে পারি না।’
আগামী ১৫ জুন ভোট হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে। প্রার্থীদের প্রচার চলবে ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।