কিছুদিন আগেই কাটা হয়েছে বোরো ধান। ইতোমধ্যে বাজারে নতুন চালও আসতে শুরু করেছে। তবে এই ভরা মৌসুমেও লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম! ক্রমাগত এই দাম বৃদ্ধিতে নড়েচড়ে বসেছে সরকারও।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে চালের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেউ অবৈধভাবে চাল মজুত করলে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এই নির্দেশের পরের দিন বুধবার বিকেল থেকেই চালের বাজারগুলোতে অভিযান শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খুলনার অনেক ব্যবসায়ী। কারণ ব্যবসায়ী হিসেবে সবার মজুতেই কিছু না কিছু চাল রয়েছে। কিন্তু কতটুকু চাল মজুত রাখলে তা আইনভঙ্গ হবে সে বিষয়ে ধারণা নেই অনেকেরই।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মাসুম বিল্লাহ জানিয়েছেন, ধান বা চাল কোনো ব্যবসায়ী কত দিন, কী পরিমাণ মজুত রাখতে পারবেন দেশের আইন ও সরকারি গেজেটে তা স্পষ্ট করে বলা আছে।
তিনি বলেন, ‘কন্ট্রোল অব অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট-১৯৫৬ অনুসারে, ২০১১ সালের ৫ মে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় একটি গেজেট জারি করেছে। সেখানে খাদ্যশস্য মজুতের ব্যাপারে সব স্পষ্ট করে বলা আছে।’
কী আছে আইনে?
আইনে বলা হয়েছে- যেসব ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই, তারা এক টনের বেশি ধান বা চাল কোনোভাবেই মজুত রাখতে পারবেন না।
এ ছাড়া লাইসেন্সধারী খুচরা ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ১৫ টন ধান বা চাল ১৫ দিনের জন্য মজুত রেখে ব্যবসা করতে পারবেন।
লাইসেন্সধারী পাইকারি ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান বা চাল ৩০ দিনের জন্য মজুত রেখে ব্যবসা করতে পারবেন।
এ ছাড়া লাইসেন্সধারী আমদানিকারকরা আমদানি করা শতভাগ ধান বা চাল ৩০ দিনের বেশি মজুত রাখতে পারবেন না।
তবে রাইস মিলে ধান ও চাল মজুত রাখার ব্যাপারে আলাদা আলাদা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, অটোমেটিক চালকলে প্রতি ১৫ দিনে ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান ও ২ গুণ চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুত রাখা যাবে।
এ ছাড়া মেজর চালকলে প্রতি ১৫ দিনে ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন ও ২ গুণ চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন মজুত রাখা যাবে।
হাসকিং চালকলে প্রতি ১৫ দিনে ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন ও ১০০ টন চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন মজুত রাখা যাবে।
আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যবসায়ী যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান বা চাল বিক্রি করতে না পারেন, তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তা অবহিত করতে হবে।
এ বিষয়ে খুলনা ধান-চাল বণিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বলন, ‘আমি ৩৭ বছর ধরে খুলনায় ধান-চালের ব্যবসা করি। তবে ভরা মৌসুমে এই রকম চালের দাম বাড়তে কখনো দেখিনি।
‘একসময়ে হাসকিং মেশিন দিয়ে ধান ছাঁটাই করে চাল বের করা হতো। আমরা মিলে গিয়ে গিয়ে চাল কিনে আনতাম। এখন ধান-চালের রাজত্ব করে অটোরাইস মিলগুলো।’
মনির আহমেদ দাবি করেন, পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা তেমন ধান বা চাল মজুত রাখেন না। ধান-চালের মজুত ও দাম সব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে অটোরাইস মিলগুলোর মালিকরা।
খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন জানান, জেলায় দুই শতাধিক লাইসেন্সধারী হাসকিং চালকল রয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি অটোরাইস মিলও আছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি আইন অনুসারে, আমরা নিয়মিত ওই মিলগুলো পরিদর্শন করছি। গতকালও আমাদের কয়েকটি দল বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করেছে। একই সঙ্গে লাইসেন্সধারী পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের গোডাউনও আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি।’
তিনি জানান, মজুত আইনে যা আছে, তার বেশি ধান বা চাল খুলনার কোনো মিলে এখনও পাওয়া যায়নি।