কথা ছিল জেলে থাকা ছেলের জামিন হবে। তাই মেয়ে ও ৩ নাতি-নাতনিকে নিয়ে অটোরিকশায় চড়ে আদালতে যাচ্ছিলেন মসিরন বিবি। শেষ পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে আর দেখা হলো না ৬০ বছর বয়সী মায়ের। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ওই পরিবারের পাঁচজনেরই।
এ ঘটনায় অটোরিকশার চালক নাসিরেরও মৃত্যু হয়েছে। নাসির ছিলেন মসিরন বিবির প্রতিবেশী। তার অটোরিকশা ভাড়া করেই বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন তিনি।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চাদপুর এলাকায় কালুখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে এই দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই পাংশা উপজেলার পাট্রা ইউনিয়িনের পুইজোর গ্রামের বাসিন্দা। ছয়জনের মৃত্যুতে পুরো গ্রামটিতে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কালুখালীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে আসলে কুষ্টিয়ামুখী মালবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ওই অটোর পেছনে থাকা একটি প্রাইভেটকারও নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
ত্রিমুখী এই সংঘর্ষে অটোরিকশায় থাকা চালকসহ ছয়জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয় কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
এ ছাড়া গুরুতর আহত প্রাইভেটকার চালক ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
নিহতদের প্রতিবেশী আসিফ মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশেই নিহত সবার বাড়ি। তারা রাজবাড়ী আদালতে যাচ্ছিল। মসিরন বিবি তার ছেলে ইসলাম মন্ডলের জামিন হবে সবাইকে নিয়ে কোর্টে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় একটা পরিবার শেষ হয়ে গেল। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না মা। গ্রামের সব মানুষ শোকের মধ্যে আছে।’
কালুখালী থানার ওসি নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে একটা বাক আছে। ওখানে কোনো সিগন্যাল নেই। আর বৃষ্টির সময় রাস্তার ওই জায়গাটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। এখানে যদি জেবরা ক্রসিংয়ের মতো বা একটা সাইন থাকতো তাহলে হয়তো দূর্ঘটনাটি ঘটতো না।’
ওসি জানান, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে রাজবাড়ীর জেল সুপার হুমায়ন কবির খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ ইসলাম মণ্ডলকে কোর্টে ওঠানো হয়। জজ কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। তাকে আমরা দুপুর তিনটার সময় মুক্ত করে দিয়েছি।’