আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলদান ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান।
ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার কুমিল্লা সিটি ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এমন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে ভোটগ্রহণের ১ মাস আগেই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার ভোটের দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময় বাকি তখন এমন নির্দেশনা দিল ইসি।
চিঠিতে বলা হয়েছে- ভোটদানের জন্য ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, সে পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার এবং কোনো প্রকার সহিংসতা বা নীতি গর্হিত কার্যকলাপ যাতে সংঘটিত না হয় তার জন্য সতর্ক থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এ ছাড়া নির্বাচনের কয়েক দিন আগে যাতে অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা অস্ত্রসহ চলাচল না করেন সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে তার সরকারি পদমর্যাদার অপব্যবহার করলে তিনি অন্যূন ৬ মাস ও অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কুমিল্লায় আগামী ১৫ জুনের এই ভোট বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রথম পরীক্ষা। সীমানা জটিলতা ও সময় স্বল্পতার কারণে অনেকটা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েই দেরিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে আউয়াল কমিশন।
এই কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে যাওয়া হবে না জানিয়ে বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও সেখানে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হচ্ছে।
পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে টানা তিনবারের মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু সেখানে ভোটে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তার মার্কা টেবিল ঘড়ি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন নৌকা। লড়াইয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারও।
কুমিল্লা ভোটে প্রচলিত ব্যালট পদ্ধতি থেকে সরে এসে পুরোপুরি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ( ইভিএম) ভোট করছে ইসি। সে লক্ষ্যে এই প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের সামনে ইভিএম কাস্টমাইজেশন করে দেখিয়েছেন ইসি। কাস্টমাইজেশন হল এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে যে ভোট দিবেন এবং যাকে ভোট দিবেন অর্থাৎ ভোটার এবং প্রার্থীদের তথ্য সংযুক্ত করা। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, কেউ কোনো কেন্দ্রে জোর করে ভোট নিতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকার বিষয়ে নির্দেশ জারি করল নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন মোট পাঁচজন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংশ্লিষ্ট দুজন ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থাকছে ১০৫টি, ভোটকক্ষ ৬৪০টি। প্রচার চলবে ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার। পরের বছর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে জেতেন মনিরুল হক সাক্কু। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খানকে তিনি হারান ৩৫ হাজার ভোটে।
২০১৭ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাল্টে লড়াইয়ে অংশ নেয়। আফজলকন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা তার বাবার তুলনায় বেশি ভোট পান। সাক্কু ওই বছর জয় পান ১১ হাজার ভোটে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ভোটের ব্যবধান কমায় ২৪ হাজার।