আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেউ সরকারি পদের অপব্যবহার করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাই এর মাধ্যমে সবাইকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়- প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে তার সরকারি পদমর্যাদার অপব্যবহার করলে তিনি অন্যূন ৬ মাস ও অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কুমিল্লায় আগামী ১৫ জুনের এই ভোট বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রথম পরীক্ষা। এই কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে যাওয়া হবে না জানিয়ে বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও সেখানে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হচ্ছে।
পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে টানা তিনবারের মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু সেখানে ভোটে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তার মার্কা টেবিল ঘড়ি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন নৌকা। লড়াইয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারও।
এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, কেউ কোনো কেন্দ্রে জোর করে ভোট নিতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে।
ভোটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকার বিষয়ে নির্দেশ জারি করল নির্বাচন কমিশন।
তারা বলছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার এবং নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য আইন ও বিধি অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করবেন এবং সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত ও নিরপেক্ষ থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে।
সেই সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল এবং নির্দেশিকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের যে ভূমিকা, দায়িত্ব ও কর্তব্য বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তাও অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন মোট পাঁচজন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসংশ্লিষ্ট দুইজন ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুইজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থাকছে ১০৫টি, ভোটকক্ষ ৬৪০টি। প্রচার চলবে ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার। পরের বছর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে জেতেন মনিরুল হক সাক্কু। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খানকে তিনি হারান ৩৫ হাজার ভোটে।
২০১৭ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাল্টে লড়াইয়ে অংশ নেয়। আফজলকন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা তার বাবার তুলনায় বেশি ভোট পান। সাক্কু ওই বছর জয় পান ১১ হাজার ভোটে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ভোটের ব্যবধান কমায় ২৪ হাজার।