যশোরের বাঘারপাড়া চাড়াভিটা পাওয়ার হাউসের বাঁদিকে চলে গেছে পিচঢালা সড়ক। এই সড়ক ধরে পাঁচ মিনিট এগোলে ডানপাশে দেখা যাবে দুটি পুকুর।
পুকুরের মাঝ দিয়ে সরু পথ দিয়ে এগিয়ে গেলেই বাগানের মধ্যে ছোট্ট সুমাইয়া আক্তার শান্তার টিনের ছাউনি দেয়া চৌচালা ঘর। দক্ষিণ শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত ৯ বছর বয়সী সুমাইয়া।
সোমবার স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী দুই শিশু ৮ বছর বয়সী তমা খাতুন ও ৬ বছর বয়সী মো. হোসাইনকে সঙ্গে নিয়ে সুমাইয়া যায় বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে। তমা সুমাইয়ার সহপাঠী আর হোসাইন ওই স্কুলের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ত।
গোসল করতে গিয়ে সুমাইয়া, তমা, হোসাইন তিনজনেরই মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় স্থানীয় ঈদগাহে জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়েছে।
সুমাইয়াদের বাড়ির কাছে যেতেই মঙ্গলবার দুপুরে শোনা যায় তার মা গুনজার বেগমের আহাজারি।
বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম রে আল্লাহ। তুমি আমার সঙ্গে কী কাজটাই না করলা! তোরা আমার বুকের ধনরে এনে দে।’
এই পুকুরে ডুবে সোমবার মৃত্যু হয়েছে একই পাড়ার তিন শিশুর
দুই বছর আগেও সন্তান হারিয়েছেন গুনজার। ১০ বছর বয়সী ছেলে মিঠুন মারা যায় ক্যানসারে। তারপর একমাত্র মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়েই ছিল তার সব স্বপ্ন।
মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে কিছুই খাননি এই মা। স্বজনরা তাকে খাওয়ার জন্য সাধলেও তিনি শুধু কেঁদে চলেছেন আর বলছেন, ‘আল্লাহ, তুমার কাছে কী এত পাপ করেছি? এমন শাস্তি দিচ্ছ কেন? তুমি আমার মেয়েকে না নিয়ে আমাকে নিতে পারতা। আমি এখন কারে নিয়ে বাঁচব?’
সুমাইয়াদের দুই বাড়ি পরেই হোসাইনের বাড়ি। বাড়ির পেছনে বাগানে বিছানা পেতে কাঁদছেন মা জহুরা বেগম আর বাবা আবু সাঈদ।
তার এক বাড়ি পরেই তমাদের বাড়ি। বারান্দায় কাঁদছিলেন মা পুতুল বেগম।
তিনি জানান, তমা স্কুল থেকে ফিরে টিভি দেখছিল। কিছুক্ষণ পর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন, তার মেয়ে পুকুরে ডুবে মারা গেছে।
ওই এলাকার প্রবীণ নুরুল হক বলেন, ‘আমার এত বয়সে একপাড়ায় একসঙ্গে তিনজন মারা যেতে দেখিনি। সন্তানদের হারিয়ে তিন পরিবারই পাগলপ্রায়। দুজনের বাবা-মায়ের তো আর কোনো সন্তানও নেই।’
মৃত তিন শিশুর পরিবারকেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় বাসুয়াড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান সরদার।