আগামী নির্বাচনগুলোতে পেশিশক্তি ব্যবহার করে যারা ভোট জয়ের স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।
নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে প্রশাসনের কারও অবহেলা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে হাতিয়ার ২৭ প্রার্থীর কাফন ও বিষ নিয়ে ইসি গেটে অবস্থান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আলমগীর বলেন, ‘পেশিশক্তি ব্যবহার করে কেউ যদি নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে যদি প্রশাসনের কারও অবহেলা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি অন্য প্রার্থীকে বাধা দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল করে বাধা দেয়া হবে।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দুই ইউনিয়নের ২৭ জন প্রার্থী গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে হাতে বিষের বোতল নিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ২৫ জন সাধারণ ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় বাধা পেয়ে প্রশাসনসহ নোয়াখালী জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে তারা এই অভিনব প্রতিবাদ বেছে নিয়েছেন বলে তারা জানান৷
নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসীর স্বামী মোহাম্মাদ আলীর বিরুদ্ধে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।
হাতিয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘এটা আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে প্রথম শুনলাম। আর আমরা কর্মকর্তা পাঠিয়েছিলাম তারাও বলল। আমরা তাদের বলেছি, ওনাদের যদি কেউ থাকে তাহলে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন।’
ভোটে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে ইসির ভূমিকা কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাধা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। যেকোনো উৎস থেকে যদি তথ্য পাই যে প্রার্থীদের বাধা দেয়া হয়েছে, ভোটারকে বাধা দেয়া হয়েছে অথবা নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে দেয়া হয়নি, তাহলে প্রথমে আমরা যেটা করি শিডিউলটাকে আমরা স্থগিত করে দিই। যাতে অন্য কোনো প্রার্থী যদি থাকে তাহলে সে যেন পুনরায় আবার নমিনেশন দিতে পারে। যদি এমন হয় ওইখানে প্রার্থী নিরাপদ নয়, তাহলে পাশের জেলা বা উপজেলায় তাদের নমিনেশন সাবমিট করার সুযোগ দিই।’
প্রার্থী, ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রচারের সুযোগ করে দেয়া এইগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনে কারও অবহেলা পেলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা মনে করি, এইগুলো করে কোনো লাভ হবে না।’
নির্বাচনের দিন যদি ভোটারকে আসতে বাধা দেয়া হয়, সেই ভোটকেও বাতিল করে দেয়ার ইচ্ছা জানিয়ে আলমগীর বলন, ‘যারা বুদ্ধিমান ও সচেতন তারা এইগুলো করবে না।’
হাতিয়ার প্রার্থীরা বাধার শিকার হয়ে পাশের সুবর্ণচর এলাকায় নমিনেশন জমা দিয়েছেন এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলন, ‘প্রত্যাহার তো সমাধান না। এখানে কার দায়িত্বহীনতা আছে সেটা আমরা দেখব। এটা যদি প্রশাসনের নাকের ডগায় হয় তাহলে এক জিনিস, আর যদি হয় দূরে, প্রেজেন্সে হয় নাই... কারণ প্রশাসন তো সবার বাড়ি বাড়ি থাকতে পারবে না।’
যদি দেখা যায় ঘটনা অনেক দূরে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের বাইরে বা সম্মুখে না, অথবা এমন একটা সময় ঘটনা হইছে যেখানে প্রশাসন দূরে ছিল। পরবর্তীতে দেখা গেল নমিনেশন পেপার সাবমিটের টাইম শেষ হয়ে গেছে। তখন তো আর প্রশাসনের করার কিছুই থাকছে না। সামনে কিছু ঘটলেও প্রশাসন সেখানে যদি নিশ্চুপ থাকে তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’
পেশিশক্তি ব্যবহার করে বিজয়ী হব, জনগণের সেবা করব এটা যদি কেউ মনে করে থাকেন তাহলে অত্যন্ত ভুল করছেন বলে জানান তিনি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন সাবেক ইসি সচিব ও বর্তমান এই কমিশনার।