ঢাকায় উদ্দীপন নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার পৌর শহরের জালাল শিকদার। শখের বসে ২০১৩ সালে ঢাকার বাণিজ্য মেলা থেকে চারটি ক্যাকটাস কিনে বাসার ছাদে রোপণ করেন। এক বছর পর ৩৫ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেন তিনি।
এরপর থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায় জালালের। ২০১৬ সালের শেষের দিকে নিজ জেলা রাজবাড়ীর মিজানপুরের গঙ্গাপ্রসাদপুরে ৪ বিঘা জমিতে মালটার বাগান করেন। তখন নার্সারির নাম দেন রোজ গার্ডেন।
গাছের চারার প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে রোজ গার্ডেনসহ আরও চারটি বাগান করেন তিনি। বাগানে সংগ্রহ করতে থাকেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা।
প্রায় দুই বছর পর ২০১৮ সালে সফলতার মুখ দেখেন জালাল। রোজ গার্ডেন থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল, ফলসহ অন্যান্য গাছের চারা বিক্রি শুরু করেন তিনি।
চারা বিক্রি লাভজনক হওয়ায় ২০১৯ সালের শেষের দিকে এনজিওর চাকরি ছেড়ে পেশা হিসাবে বেছে নেন নার্সারি ব্যবসা। চারটি ক্যাকটাস গাছ থেকে এখন তিনি ৪টি নার্সারির মালিক। আয় হয় মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা। এখন ৭ বিঘা জমির ওপরেই তার রোজ গার্ডেন নার্সারি।
অফিস, প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি সাজানো এবং বাগান ও ছাদ বাগান তৈরিতে হরেক রকমের গাছের চারা কিনতে ক্রেতারা প্রতিনিয়তই ভিড় করছেন জালালের নার্সারিতে। এ ছাড়া বাগানের ফুল, ফল ও বিভিন্ন গাছ দেখতেও ভিড় জমায় বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীরা।
রোজ গার্ডেন নার্সারিতে আছে দেশি ও বিদেশি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফলজ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫ থেকে ৬ লাখ গাছের চারা। এ ছাড়া রয়েছে প্রায় তিন শ প্রজাতির ফুলের চারা।
নার্সারি থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন নার্সারির মালিক জালাল। গড়ে মাসে আয় করেন দুই লাখ টাকা।
রোজ গার্ডেন নার্সারিতে আছে বেনানা, কিউজাই, পালমালসহ প্রায় ৫০ ধরনের আম, হরিমন ৯৯, আন্না, রেড, কাস্মেরিসহ ৫ ধরনের আপেল, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, থাইসহ ৮ থেকে ৯ ধরনের পেয়ারা, বল সুন্দরি, কাশ্মীরি আপেল কুলসহ ১০ ধরনের বরই এবং বেদানা, নারকেল, খেজুর, আঙুর, মালটাসহ প্রায় আড়াই শ ধরনের ফলের চারা।
তড়িৎ চন্ডাল, রাহু চন্ডালসহ প্রায় ২২ থেকে ২৩ প্রজাতির ঔষুধিসহ ৭ থেকে ৮ প্রজাতির বনজ গাছের চারাও রয়েছে তার নার্সারিতে।
এ ছাড়া নার্সারিতে কাঠ গোলাপ, নীলকণ্ঠ, গন্ধরাজ, বেলী, জুই, থাইল্যান্ড জবা, গোলাপ, এডিনিয়ামসসহ প্রায় ৩ শতাধিক প্রজাতির ফুলের চারা সংগ্রহে রয়েছে।
তার বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক। নার্সারি পরিচর্যাকারী শ্রমিকরা জানান, তারা বাগান দেখাশোনা ও গাছের চারা রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এ বাগানে কাজ করেই তাদের সংসার চলে। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে চারা কিনতে, আবার অনেকে দেখতে আসেন।
সব ধরনের ফুল, ফল ও ঔষুধি গাছের চারা এখানে আছে। ক্রেতারাও বলেন এখানে সব ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায় এবং জায়গাটা দেখতেও অনেক ভালো লাগে। এজন্য তারা গাছ কিনতে আসেন, তবে দাম একটু বেশি।
এই নার্সারির কর্মচারী হযরত আলী বলেন, ‘আমি এক মাস ধরে এখানে কাজ করছি। গাছ দেখাশুনা করি, গাছে পানি দেই। আমার গাছগুলো দেখতে ভালোই লাগে।’
রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর এলাকার তামান্না আক্তার বাগানে ঘুরতে এসে বলেন, ‘বিকেলে এখানে আসলে ভালো লাগে। অনেক গাছ দেখা যায়, অনেক রকম ফুল আছে, ছবি তুলি। ভালো লাগলে কিনেও নিয়ে যাই। বিকেলে জায়গাটা অনেক সুন্দর লাগে।’
ক্রেতা শুভ্র সুকান্ত বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির ছাদের জন্য মাঝেই মাঝেই বিভিন্ন গাছ কিনি। বাড়ির পাশে এই নার্সারি থাকায় এখান থেকেই বেশি কেনা হয়। এখানকার গাছগুলোর দাম একটু বেশি নেয় অন্য জায়গার তুলনায়। তবে গাছগুলো ভালো হওয়ায় একটু বেশি দামেও কিনি।’
একটা ছোট ক্যাকটাসের চারার দাম ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বলে জানান তিনি।
উদ্যোক্তা জালাল শিকদার জানান, প্রথমে কষ্ট হলেও কৃষি অফিসের সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে নার্সারির পরিধি আরও বাড়াবেন। এখন তার সংগ্রহে সব ধরনের ফুল, ফলের চারা রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। জেলায় ছোট-বড় ৪০টির বেশি নার্সারি আছে। পৌর এলাকায় জালাল তরুণ উদ্দ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম। আমরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। জালালের দেখাদেখি এখন অনেকে নার্সারি ও বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন।’