সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দুই ইউনিয়নের ২৭ জন প্রার্থী গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে এবং হাতে বিষের বোতল নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচারে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে দুই ইউপির ২ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও ২৫ জন মেম্বার প্রার্থী এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
তাদের অভিযোগ, নির্বাচনি প্রচারে তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা নির্বাচন অফিসে লিখিতভাবে জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি। আজকের মধ্যে এর কোনো প্রতিকার না পেলে বিষ পানে আত্মহত্যার হুমকি দেন প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার কিছু পরে ইসি ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রার্থীরা বলেন, আগামী ১৫ জুন ভোটের আগে হাতিয়ার নবগঠিত ১ নম্বর হরণী ও ২ নম্বর চানন্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ওপর হামলা, প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। নোয়াখালী-৬ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী সাবেক এমপি মোহাম্মাদ আলীর সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের প্রচারকাজে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রার্থীরা।
তারা বলছেন, প্রার্থী হয়েও তারা নিজেদের বাড়ি যেতে পারেন না৷ ভোটের প্রচার করতে পারছেন না, মনোনয়নপত্র নিজ এলাকার অফিসে জমা না দিতে পেরে তারা পাশের উপজেলা সুবর্ণচরে গিয়ে জমা দিয়েছেন। তাই আজকের মধ্যে যদি কোনো বিচার না পান, তাহলে কাল প্রধান ফটকের সামনে একই কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোহাম্মাদ আলীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
১ নম্বর হরণী ইউপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে বাড়িঘরে যাইয়া কী করমু। সিইসির সামনে বিষ খাইয়া মারা যামু। কালকে প্রধান ফটকের সামনে শুইয়া পড়মু।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে হাতিয়া উপজেলাবহির্ভূত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিং অফিসার এবং প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জনবল নিয়োগ করা আবশ্যক।’
মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান এমপির স্বামী মোহাম্মাদ আলী তার সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রার্থীদের ওপর হামলা ও প্রার্থীদের প্রচারণার কাজ বন্ধ করে দেন। বর্তমানে প্রার্থীদের সব কাজ বন্ধ রয়েছে। এর আগে হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ডে সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেছে, যে কারণে ভোটাররা আতঙ্কিত। তাই প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা প্রয়োজন।’
হরিণী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ প্রার্থী ছালাউদ্দিন বলেন, ‘গত ২৮ তারিখ প্রচার করতে গিয়ে হাতিয়া বাজারে মাইর খাইছি। হকস্টিক, লাঠি দিয়া পিটাইছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, বিজিবিসহ সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ওই এলাকায় ওসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সার্কেল এসপির প্রত্যাহারও চেয়েছেন অবস্থান কর্মসূচিতে আসা প্রার্থীরা।
তাছাড়া ভোটের পরিবেশ ঠিক করা সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
দুপুর ১২টা ৪১ মিনিটে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া এসে অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
পরে ব্যানার, কাফনের কাপড় খুলে প্রার্থীরা পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
ওসি উৎপল বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে এভাবে বসার কোনো সুযোগ নাই। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। যদি তারা আমাদের কথা না শোনে তাহলে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করব।’