বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঠা ঠা বরেন্দ্রে আমের মৌতাত, হিমাগার নেই

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ১০:০৪

আমের ভালো দাম থাকে মৌসুমের প্রথম ও শেষের দিকে। কিন্তু মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে আমের বাজার পড়ে যায়। তখন দাম অনেক কম থাকে। চাষিরা বলছেন, সংরক্ষণাগার থাকলে তারা ভালো দাম পাবেন।

নওগাঁর সীমান্তবর্তী পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার কিছু অংশ ‘ঠা ঠা বরেন্দ্র’ নামে পরিচিত। পানি স্বল্পতার কারণে এখানে অন্যান্য ফসল চাষ করে লোকশান গুনতে হয়। এ কারণে এসব জমিতে এখন ধান চাষ কমিয়ে আম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।

জেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয় সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়। এসব এলাকার আম চাষিরা জানান, আমের ভালো দাম থাকে মৌসুমের প্রথম ও শেষের দিকে। কিন্তু মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে আমের বাজার পড়ে যায়। তখন দাম অনেক কম থাকে।

জেলায় আমের সবচেয়ে বড় বাজারটি বসে সাপাহার উপজেলায়। পাশেই ধামইরহাট, পত্নীতলা, পোরশা এমনকি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অনেক ব্যবসায়ী আম বিক্রি করতে আসে এই বাজারে।

বিপুল ফলনের কারণে এ সময় আমের বাজার দর কমে যায়। আমের সংরক্ষণাগার ও বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের বড় অংশ লুফে নেন।

চাষিরা বলছেন, জেলায় আম সংরক্ষণাগার করা হলে তারা পরবর্তী সময়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পেতে পারতেন।

জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গত ২৫ মে থেকে গুটি জাতের আম নামানোর মধ্য দিয়ে জেলায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের জাতের আম নামানো হবে।

নওগাঁর পত্নীতলার আম চাষি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে আম উৎপাদন হয় এখানে। শুরু ও শেষের দিকে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়। সরকারি বা বেসরকারিভাবে জেলায় কোনো হিমাগার নেই। আম সংরক্ষণের জন্য যদি একটি হিমাগার থাকত, তবে সেখানে আম সংরক্ষণ করে সুবিধামতো সময়ে বিক্রি করা গেলে লাভবান হওয়া যেত।’

সাপাহার উপজেলার আইহাই গ্রামের আম চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হিমাগার থাকলে সেখানে ২০ থেকে ৩০ দিন রেখে আমগুলো বিক্রি করা যেত। অনেক সময় আমের দাম কমে যায়।’

পোরশা উপজেলা সদরের আম চাষি রেজাউল করিম বলেন, ‘আম দ্রুত পচে যায়। ঝড়-বৃষ্টি হলে বা ব্যবসায়ীরা না কিনতে চাইলে আম নষ্ট হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে আম যদি কিছু দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা যেত, সেটা কৃষকদের উপকারে লাগত।’

সাপাহারের গোডাউন পাড়ার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা ও আম চাষি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমি নিজেও প্রতি বছর দেশ ও দেশের বাইরে আম পাঠাই। বেশ কয়েক বছর ধরে নওগাঁয় বিপুল পরিমাণে আমের আবাদ হচ্ছে। অন্যান্য ফসল সংরক্ষণ করে রাখা যায়। আম রাখারও ব্যবস্থা থাকা উচিত।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামছুল ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে বলেন, নওগাঁয় চলতি মৌসুমেও আমের ব্যাপক চাষ হয়েছে। হিমাগার থাকলে চাষিরা কিছুদিন আম হিমাগারে রেখে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। একটি হিমাগার খুবই প্রয়োজন জেলায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কৃষি অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নওগাঁর আম দেশ ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। আম চাষিদের সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ আমরা দিয়ে যাচ্ছি। চাষিদের উৎপাদিত আম সংরক্ষণের জন্য একটি আম সংরক্ষণাগার প্রয়োজন। জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নওগাঁর সাপাহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। গড়ে উঠবে জুস কারখানা। যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এতে করে আম চাষিরা আরও ভালো দাম ও লাভবান হবেন।

‘অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এর আশপাশের জেলার পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। আমরা আশা করছি, অচিরেই আম চাষিদের আম সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার গড়ে তোলা হবে।’

জেলা কৃষি বিভাগের অনুযায়ী, চলতি মৌসমে নওগাঁ জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেশি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন।

গোপাল ভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম চাষ হচ্ছে। এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। সে অনুযায়ী ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর