বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধান কেনায় প্রতিযোগিতার আগুন চালের বাজারে

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ০৮:২৫

‘চালকল মালিকদের দাবি, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কমের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। বেশি দামে ধান কেনার পর চাল উৎপাদনের খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’

দেশের অন্য জেলার মতো উত্তরের জেলা নওগাঁর চালের বাজারও অস্থির। চলতি ভরা মৌসুমে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জেলাটির খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে চালকল মালিকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। আর এ থেকেই বেড়েছে ধানের দাম। যার প্রভাব পড়েছে চালের খুচরা বাজারে।

চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নওগাঁর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

সরেজমিনে নওগাঁ শহরের পৌর খুচরা চালবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকায়। কাটারিভোগ চাল প্রতি কেজি ৬৮ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। জিরাশাইল চাল এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

শহরের পৌর খুচরা চালবাজারে চাল কিনতে এসেছেন রিকশাচালক কুদ্দুস মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘দিন শেষে যে টাকা পাই চাল কিনতে এসে তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে। অন্যান্য বাজার তো দূরের কথা। এভাবে যদি প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।’

নওগাঁ শহরের থানার মোড় এলাকার ভ্যানচালক নজরুল হোসেন চাল কিনতে এসেছেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ বাজারে এসে দেখি চালের দাম বেড়েছে। স্বর্ণা-৫ জাতের পাঁচ কেজি চাল কিনতে আসছিলাম, দাম বেশি দেখে তিন কেজি কিনলাম। যে চাল কিছুদিন আগে ৪২ টাকায় কিনছিলাম আজ ৫০ টাকা কেজি দরে কিনলাম।’

শহরের খাস-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা জাফর আলী কাটারিভোগ চাল কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি ৬৮ টাকা দরে কিনেছেন। পরে চাল কিনতে গেলে দেখেন, সেই চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে ৫ কেজি চাল কিনে নিয়ে গেছি ৬৮ টাকা দরে। সেই চাল আজ এসে দেখি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। কেজিতে ৭ টাকা করে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মতো মানুষের অনেক বড় সমস্যা হবে, যা বোঝার কেউ নেই। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালের দাম। এইভাবে চলা অসম্ভব।’

চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নওগাঁ পৌর খুচরা চালবাজার সমিতির সভাপতি উত্তম সরকার বলেন, ‘পাইকারি কেনার ওপর খুচরা দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ানো বা কমানো কোনো কিছুতেই খুচরা বিক্রেতাদের কিছু করার থাকে না। এখন মোকাম থেকেই প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে।’

চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই বলে দাবি করেন এই খুচরা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত যদি সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটর করা হতো তাহলে এভাবে হুট করে চালের দাম বাড়ত না।’

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘বোরো ও আমনের ভরা মৌসুমে সাধারণত সরবরাহ বেশি থাকায় চালের দাম বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। কিন্তু এবার ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর থেকে বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসা শুরু করতেই চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তির দিকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে। অবস্থা এমন হয়েছে এক দিন পর পর মোকামে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে বাড়ছে।’

এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খেতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে কমেছে ক্রেতা। সবাই অপেক্ষা করছে দাম কমার।’

ধানের বাড়তি দামের কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চোকদার।

তিনি দাবি করেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কাটারি, জিরাশাইলসহ প্রতি মণ ধান ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যে ধান দুই সপ্তাহ আগে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ ছিল, সেটি বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা মণ দরে কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হলো হঠাৎ ধানের এই দাম বৃদ্ধি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কমের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এরপর পরিবহন, শ্রমিক খরচ ও উৎপাদন খরচ তো রয়েছেই। সব খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’

এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জেনেছি। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

যেসব ব্যবসায়ী অকারণে চালের দাম বাড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর