স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার আঞ্চলিক বাণিজ্য জোরদারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ দ্রুতই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় হিসেবে সরকার আঞ্চলিক বাণিজ্য জোরদার ও সহজীকরণে জোর দিচ্ছে।
‘এ ক্ষেত্রে দেশের রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে সরকার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে রিজিওনাল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আরটিএ) সম্পাদনের উদ্যোগ নিয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত রিজিওনাল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আরটিএ) পলিসি ২০২২ এর বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ নীতিমালা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই নীতিমালায় কিভাবে চুক্তি সম্পন্ন হবে, এতে রুলস অফ অরিজিন, প্রডাক্ট স্পেসিফিকেশন রুলস, সেফটি মেজারস, সেনিটারি ও ফাইটো সেনেটারি মেজারস, টেকনিক্যাল ভেরিয়াস ফর ট্রেড- অর্থাৎ বাণিজ্যের এসব ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে আমরা কিভাবে এগোবো সেসব বিষয়ে একটি বাণিজ্য সহজীকরণ নীতিমালা করা হয়েছে।
‘সেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, লেবার ইস্যুজ, জেন্ডার ইকুইটি, ই-কমার্স, ডিজিটাল বাণিজ্য, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স, কম্পিটিশন পলিসি- এগুলোর বিষয়ে কিভাবে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে দরকষাকষিতে যেতে পারি তার একটি দিকনির্দেশনা এই নীতিমালায় রাখা হয়েছে। আবার আঞ্চলিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তা-ও নীতিমালায় উল্লেখ করা আছে।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নয়টি এজেন্ডা উত্থাপন করা হয়। এর সবক’টিই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার প্রথম এজেন্ডা ছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন-২০২২ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন। এই খসড়া আইনে ৬৫টি ধারা রয়েছে।
বিসিক-এর অধীনে দেশে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটানো এবং এ খাতকে এগিয়ে নিতে আইনটি করা হয়েছে। আগের আইনে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তেমন সুযোগ ছিল না। নতুন আইনে নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।
আইনটিতে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিলে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ভূমি দখল ও ভূমি দখলের অভিযোগের নিষ্পত্তি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আইনটিতে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সংশোধন আইন, ২০২২-এর খসড়াও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আছে। ওই ইনস্টিটিউটের আওতায় ভাষা গবেষণা ট্রাস্ট করার প্রস্তাব এসেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ভাষা গবেষণা ট্রাস্ট। ভাষায় প্রমিতায়ন অনুবাদ এবং ভাষা সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া তথা ভাষার উন্নয়নে এ ট্রাস্ট কাজ করবে। আইনে এ ট্রাস্টের একটি স্থায়ী তহবিল রাখার সুপারিশ করা হয়েছে, যা ভাষা গবেষণা উন্নয়নে স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে ব্যয় হবে।’
বাংলাদেশ ও ওমানের মধ্যে কূটনীতিক, অফিসিয়াল, বিশেষ বা সার্ভিস পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ওমান সরকারের সঙ্গে এই চুক্তির আওতায় কূটনীতিক, অফিশিয়াল, স্পেশাল ও সার্ভিস হোল্ডাররা বিনা ভিসায় ওমানে ভ্রমণ করতে পারবেন।
এছাড়া ভারত হয়ে বাংলাদেশে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ট্রানজিট সুবিধা পেতে ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত বিবিআইএন চুক্তির বাংলাদেশ অংশের কার্যকারিতা প্রশ্নে পুনর্মূল্যায়ন চুক্তি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে এই চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন হলে নেপাল ও ভুটান থেকে যে কোনো মালামাল ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসতে পারবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শিক্ষা মূল্যায়ন কেন্দ্র আইন ২০২২-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে পৃথক ট্রাস্ট করার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা।