হাতে বাকি ১৫ দিন। ওয়ার্ড সংখ্যা ২৭টি। যেতে হবে সব এলাকায়। এর বাইরে সব কেন্দ্রের জন্য এজেন্ট ঠিক করা, কেন্দ্র পরিদর্শন, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক, সবকিছুই এখন গুরুত্বপূর্ণ।
সব মিলিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের এখন ফুরসত নেই। দিনরাত এক করে প্রচার করছেন তারা।
প্রার্থীরা বলছেন, গভীর রাতে বাসায় ফিরে আবার সকাল করে বের হতে হয়। সব মিলিয়ে বিশ্রামের সময় ছয় ঘণ্টারও কম। এর মধ্যে ঘুমের জন্য পাওয়া যায় চার ঘণ্টা। বেশির ভাগ সময় নাশতা ও দুপুরের খাবার পথেই খাচ্ছেন তারা।
গত দুই নির্বাচনে জয় পেয়ে এবার হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ভোট করতে চাওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু।
এবার তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি নিজ দলের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাও। ফলে তার জন্য চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই।
সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে টানা ১০ বছর পার করা সাক্কু এর আগে ছিলেন পৌরসভারও মেয়র। সব মিলিয়ে ১৫ বছর নগর পরিচালনায় সাফল্য-ব্যর্থতার সমীকরণ মেলাচ্ছে ভোটাররা।
গতবার সাক্কুর মার্কা ছিল ধানের শীষ। বিএনপি ভোটে অংশ না নেয়ায় স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে সাক্কু এবার মার্কা বেছে নিয়েছেন টেবিল ঘড়ি।
নিউজবাংলাকে সাক্কু বলেন, ‘আমি দুইবারের সিটি মেয়র। এর আগে পৌরসভার মেয়র আছিলাম। আমি প্রতিটা পাড়ামহল্লা চিনি। লোকজনদেরকেও চিনি। তারা আমারে চিনে। গণসংযোগের সময় মানুষ আমাকে দেখলে উৎসাহ দেয়।
‘আমি সহালে ঘুম থাইক্কা উডি। অহন ইলেকশন। ঘুমানের টাইম পাই না। তিন চাইর ঘণ্টা ঘুমাই। হারা বছর কাম করছি। এহন মাইনষের কাছে যাই। তারার কাছে আমি ভোট চাই। তারা আমারে আশা দিছে এবারও ভোট দিব। আমি ভোটে জিতলে আমার বাহি থাকা কামডিও করমু।’
সাক্কুকে হারাতে প্রতিবার প্রার্থী বদল করছে আওয়ামী লীগ। ২০১২ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে গোটা দেশে ক্ষমতাসীন দল বেছে নেয় কুমিল্লার বর্ষীয়ান নেতা আফজল খানকে। সাক্কু তাকে হারিয়ে দেন অবলীলায়।
২০১৭ সালে পরের ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাল্টে নৌকা তুলে দেয় আফজল কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমার হাতে। তিনি বাবার তুলনায় ভোটের ব্যবধান কমান ২৪ হাজার। তবে তাতেও ব্যবধান থেকে যায় ১১ হাজার।
এবার আওয়ামী লীগ নৌকা দিয়েছে আফজল পরিবারের বাইরে গিয়ে নিজ দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের বলয়ের আরফানুল হক রিফাতকে।
কিছুদিন আগেও সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে ফিরে এসেছেন তিনি। মনোনয়ন পাওয়ার পর শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি আপাতত দূরে ঠেলে রাতদিন এক করে প্রচারে ব্যস্ত তিনি।
নৌকার প্রার্থী রিফাত জানান, তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে বসেন। আগে থেকে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী একেক এলাকায় বের হন গণসংযোগে। হাতে হ্যান্ডবিল থাকে। যেসব পাড়ামহল্লায় যান সেখানেই বিতরণ করেন সেগুলো।
নিউজবাংলাকে রিফাত বলেন, ‘আমি ইশতেহার ঘোষণা করেছি। নগর ভবনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখব। সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হবে না।’
রাজনীতিতে কয়েক যুগের পদচারণা থাকলেও ভোট এবারই রিফাতের। নির্বাচনি অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আগেও গণসংযোগ করেছি। দলের জন্য মিছিল মিটিং করেছি। আমার অভিজ্ঞতা আছে। পার্থক্যটা হলো, এবার আমি নিজেই প্রার্থী হয়েছি। গণসংযোগে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
ভোটে মূল লড়াইটা সাক্কু আর রিফাতের মধ্যে হবে নাকি সেখানে আরেক প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারও অবস্থান গড়ে নেবেন, তা নিয়ে নানা সমীকরণ কাজ করছে।
কায়সার বিএনপিরই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল করতেন। ভোট করতে সংগঠনের পদ হারান।
সাক্কুকে তার পছন্দ নয়। তাই নিজেই দাঁড়িয়েছেন ভোটে। তিনি কত ভোট পাবেন, সেটি আসলে সাক্কুর বাক্স থেকে পড়বে, ফলে জয়-পরাজয়ে কায়সার হয়ে উঠবেন নিয়ামক। তবে তিনি অতসব ভাবছেন না, ঘোড়া প্রতীক নিয়ে জয়ের স্বপ্নই দেখছেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থাকলেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়াটা এবারই প্রথম কায়সারের জন্য।
গত নির্বাচনে খেটেছেন সাক্কুর জন্য। এবার তারই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ভোটে অংশ নিতে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পদও ছেড়েছেন। ভোট বর্জনে বিএনপির সিদ্ধান্ত না মানায় সাক্কুর মতো তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে সংগঠন থেকে।
নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে। আমি বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।
‘খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। ঘরে নাশতা করা হয় না। পথে কোথাও নাশতা করি। গণসংযোগ করি। রাতে এমন হয় ঘুমাতে গেলে ফজরের আজান শুনি। ক্লান্তি ভর করে। তবে কিছু করার নেই। কারণ আমি নগরবাসীকে কথা দিয়েছি সবার জন্য নগর গড়ব। সে জন্য সবার দ্বারে দ্বারে গিয়ে আমার মনের কথা বলছি। তাই এখন আসলে ঘুমানোর সময় নেই।’
মেয়র পদে আরও দুইজন প্রার্থী আছেন, যাদের নিয়ে আসলে তেমন কোনো আলোচনা নেই।
এদের একজন চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম এবং তৃতীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল। তারাও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নগরবাসীর মূল্যায়নের আশায় দুইজনই।