ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালী করতে হাটবাজার, ফেরিঘাট, জলমহাল-বালুমহাল ইজারার ক্ষমতা এবং অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সব বরাদ্দ মন্ত্রণালয় হতে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে দেয়ার দাবি করেছেন চেয়ারম্যানরা।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান তারা।
এ সময় ইজারা থেকে আয় ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় হিসাবে দেয়া, প্রশাসনিক ইউনিট আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করাসহ ১২টি দাবিও জানান চেয়ারম্যানরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বিল্লাল।
বক্তব্যে তিনি বলেন, সুদীর্ঘকাল থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শত প্রতিকূলতার মধ্যে নিরলসভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দিয়ে আসছেন। সেবা দিতে গিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করেন। বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছাস, বন্যা, মহামারিসহ বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেবা অব্যাহত রাখতে হয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের।
গ্রামপর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এই জনপ্রতিনিধিরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাখার কারণে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ের সরকারপ্রধানরা ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু বলে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, কোনো সরকারই স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে স্থানীয় উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে কার্যকর কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রান্তিক পর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। সরকারের নেয়া এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদকেই ভূমিকা রাখতে হয়। স্থানীয়ভাবে আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু ইউপি। সুতরাং ইউপির ক্ষমতাকে দুর্বল রেখে কোনভাবেই স্থানীয় কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।'
এসব বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১২ দফা দাবি তুলে ধরে তার বাস্তবায়ন দাবি করা হয়।
সংগঠনটির ১২ দাবি
১. প্রশাসনিক ইউনিট আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।
২. চেয়ারম্যানদের সম্মানী বাড়িয়ে ৪০ হাজার ও মেম্বারদের ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা।
৩. ইউনিয়ন পরিষদসমূহের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত সব ধরনের হাট-বাজার, জলমহাল, বালুমহাল, সাইরাতমহল, ফেরিঘাটসমূহ ইজারা দেয়ার ক্ষমতা ও ইজারা থেকে আয় ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় হিসাবে তহবিলে দেয়া।
৪. ভূমি উন্নয়ন কর ১ শতাংশ হতে ২ শতাংশে উন্নীত করে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলের জমা।
৫. জন্ম নিবন্ধন ও বিয়ে নিবন্ধনের ফি ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করা।
৬. ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সব বরাদ্দ মন্ত্রণালয় হতে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে দেয়া।
৭. চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হলে আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানদের গ্রেপ্তার ও সাময়িক বরখাস্ত না করা।
৮. ক. গ্রাম আদালতের বিচারিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মোকদ্দমায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ আদায়ে ক্ষমতা দেয়া।
খ. প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে একজন বেঞ্চ সহকারী ও একজন পিয়ন নিয়োগ দেয়া।
৯. ইউনিয়ন আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে একজন সহকারী পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া।
১০. ইউনিয়ন পরিষদের উপর ঊর্ধ্বতন মহলের সব ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।
১১. ইউনিয়ন পরিষদকে গ্রাম পুলিশ নিয়োগের এবং অপসারণের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া।
১২. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে একটি অত্যাধুনিক পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ করা।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান সমিতির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।